রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে অনুপ্রবেশ করা ভিনদেশি অপ্রয়োজনীয়, বিজাতীয় ও অপসংস্কৃতির সবকিছু বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর এক অনুষ্ঠানে এ আহবান জানান। তিান বলেন, ‘আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে প্রতিনিয়ত আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ভিনদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটছে। আমাদেও অপ্রয়োজনীয় ও অপসংস্কৃতি বর্জন করতে হবে।
আজ ‘শিল্পকলা পদক ২০১৯ ও ২০২০’ প্রদান অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে তৃণমূল পর্যায়েই উদ্যোগ নিতে হবে। তাই তাদেরকে সুস্থ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে’। রাষ্ট্রপতি হামিদ সংস্কৃতির চর্চা তৃণমূল, বিশেষ করে পরিবার থেকেই, শুরু করারও তাগিদ দেন। রাষ্ট্রপতি দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর কার্যক্রম এখন ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ’ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন কার্যক্রম দেশে-বিদেশে বিশেষ করে তৃণমূল র্পযায়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও র্কম এবং তাঁর শিল্প ও সাংস্কৃতিক ভাবনা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আবহমান কালের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে সচেতন করতে হবে’। সংস্কৃতিকে জীবনের দর্পণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্য জানিয়ে দেয় যে, জাতি হিসেবে আমরা কতটা উন্নত ও আধুনিক। তিনি দেশের যুবসমাজকে আধুনিক, দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হলে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। রাষ্ট্রপতি মনে করেন জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় প্রধান অস্ত্রের ভূমিকা রাখতে পারে আমাদের সংস্কৃতি । রাষ্ট্রপতি হামিদ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে আর যুব সম্প্রদায় ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, গেমসসহ বিভিন্ন অ্যাপস-এর পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। তাদের কাছে মোবাইল আর ল্যাপটপই বিনোদন আর খেলাধুলার প্রধান সামগ্রী। এভাবে চলতে থাকলে, তারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকেই একদিন ভুলে যাবে। তিনি বলেন, সামাজিক অবক্ষয়রোধে সংস্কৃতি হচ্ছে রক্ষাকবচ। সমাজ থেকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করতে সংস্কৃতির বিকাশ খুবই জরুরি। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহর, নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রতিটি স্তরে সংস্কৃতির র্চচা যত বেশি হবে, সমাজও ততবেশি আলোকিত হবে। আর আলোকিত সমাজই পারে মানবিক সমাজ গড়তে এবং একটি দেশ ও জাতির কাংক্ষিত সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে।
অনুষ্ঠানে ২০ জন গুণী শিল্পীকে পদক প্রদান করা হয়।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ, এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আবুল মনসুর এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বঙ্গভবনের গ্যালারি হলে এ সময় রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।বাসস