পৃথিবীর ইতিহাসে যতধরনের হত্যাকান্ড সংগঠিত হয়েছে, প্রত্যেক হত্যাকান্ডের কমবেশি বিচার হয়েছে যার কারণে খুনীরা তাদের জীবন পরিবর্তনে নিজেদের নিয়োজিত করেছে । কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের বেলায় হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না এনে বরং তাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে।
সেকান্দর বক্স নাটকের একাংশ দিয়ে শুরু করতে চাই, সেকান্দর বক্স যখন তার সাঙ্গ-পাঙ্গদের নিয়ে জাহাজে ভ্রমণে ছিলেন হঠাৎ একদল ডাকাত তাদের আক্রমণ করে বসল! ডাকাত দলের নেতা জানতে চাইল এই জাহাজে সেকান্দর বক্স কেডা? জাহাজের সকলেই নিজেকে রক্ষা করার জন্য একে অপরকে সেকান্দর বক্স বলে আঙুল উচিয়ে দেখাতে লাগলো।
মজার ব্যাপার হলো সেকান্দর বক্স নিজেও অপর জনের দিকে আঙুল উঁচিয়ে ডাকত দলকে বললো ভাই এই ছেলেটা সেকান্দর বক্স, এর বাপ-দাদা চৌদ্দগোষ্ঠিই সেকান্দর বক্স।
ডাকাত দল কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে চালাকীর স্বরে বললো আমরা শুধু সেকান্দর বক্সকে বাচিয়ে রাখবো বাকিদের……..।
তখন সকলেই উচু গলায় একবাক্যে বলে উঠলো, ভাই আমিই সেকান্দর বক্স, এভাবে সকলেই।
একপর্যায়ে সেকান্দর বক্স নিজেই বললো ভাই আসলে আমিই সেকান্দর বক্স, ভয়ে মিথ্যা বলেছিলাম।
বলতে ছেয়েছিলাম! খুনিরা খুন করার পর প্রত্যেকেই নিজেকে আড়াল করে রাখবে এটাই চিরন্তন সত্য আর যদি কোন একপক্ষ ঘোষণা করে যে খুনীরা যদি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে তাহলে তাদের সরকারি চাকুরী প্রদান, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ প্রদান করা হইবে, তাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা কোটা ও উপবৃত্তি প্রদান করা হইবে, তাদের নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হইবে,তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করা হইবে, পূর্ণবাসনের জন্য প্রতিজনকে ৫০,০০০/- করে প্রদান করা হইবে শুধু তাই নয় দায়েরকৃত মামলা, গ্রেফতারী পরোয়ানা, হুলিয়া, জেলে আটক থাকলে মুক্তি সহ ব্যাংক ঋন থাকলে তার সুদসহ মওকুফ ও সহজ স্বর্তে ঋন প্রদানের মত এতগুলো সুযোগ সুবিধা যদি কেউ পায় তাহলে যে কেউ সেকান্দর বক্স নাটকের মত নিজেকে খুনী সন্ত্রাস বা শান্তিবাহীনি বলে দাবিতে মরিয়া হয়ে উঠবে এটাই চিরন্তন সত্য।
১৯৮৪সালের ৩১মে রাঙামাটির বরকল উপজেলার ভূষনছড়া ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৩১মে দিবাগত রাতে অনুমানিক ৪টা থেকে পরদিন সকাল ৮ঃ৩০টা পর্যন্ত নিরস্ত্র নিহীহ নিরপরাধ ঘুমন্ত ও পলায়নরত মানুষের ওপর তৎকালীন শান্তিবাহিনীর এরিয়া কমান্ডার মেজর রাজেশ( মনি স্বপন দেওয়ান) এর নেতৃত্বে প্রতিটি বাঙালি গ্রামে অগ্নি-সংযোগ লূটরাজ, গনধর্ষন এর হুলিখেলা চলছিলো সেদিন।
মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যাবধানে ১৪৫০জনের অধিক নারী শিশু বৃদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিলো, আহত অপহরণ ও গুম করা হয় সহস্রাধিক।
বরকলে সেদিন ১৬০০পরিবারের মধ্য ৮০০পরিবার আক্রান্ত হয়েছিল ৫৩০পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিন্ন হয়ে গিয়েছিল, হাত পা বেধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে দা দিয়ে কুপিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে বেয়নেট দিয়ে কুচিয়ে নানানভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছিল।
সেই লোমহর্ষক ঘটনার বর্ণনা প্রাণে বেছে যাওয়া কতিপয় মানুষের মুখে শুনলে এখনো গা শিউরে উঠে তবে দূঃখজনক হলেও সত্য এই যে, সেই নারকীয় হত্যাকান্ডের নায়ক মনি স্বপন দেওয়ান কে বাংলাদেশ সরকার পার্বত্য চুক্তির পরবর্তী সময়ে রাঙামাটির এমপি ও পরবর্তী সময়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বানিয়ে গণহত্যা পরিচালনার নায়ক হিসেবে পুরস্কৃত করেছিলো।
যে কথা না বললেই নয়, এভাবে সন্ত্রাসী এবং খুনীদের যদি বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করা হয় তাহলে যেকোন লোক বেকারত্ব নিরসনের লক্ষে হলেও হাতে অস্ত্র তুলে নিবে আর এটাই স্বাভাবিক। (ধারাবাহিক চলবে)
লেখকঃ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আখন্দ কেন্দ্রীয়, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।