পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন যে কঠিন একটি সময়ের মধ্যে জাতীয় বাজেট করা হয়েছে। বাজেটে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) থেকে বড় পরিমাণ রাজস্ব আদায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন মূল্য সংযোজন কর ভালো কর নয়। আমি বলি ভালো। কেউ ভ্যাট না দিতে চাইলে কিছু কিনবেন না।’
শনিবার মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এম এ মান্নান এ কথা বলেন।
ঢাকার মতিঝিলে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় বৈশ্বিক পরিস্থিতিসহ প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে বক্তব্য দেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জায়েদী সাত্তার। মেট্রো চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামরান টি রহমান এতে স্বাগত বক্তব্য দেন। পিআরআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ, মেট্রো চেম্বারের সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম ও পরিচালক আদিব এইচ খান ছিলেন নির্ধারিত আলোচক।
আগামী অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। এ থেকে ভ্যাটের অংশ সবচেয়ে বেশি—১ লাখ ৬৩ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা। আর আয়করের অংশ ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। বাকি টাকা শুল্কের অংশ।
মেট্রো চেম্বারের বয়স ১২০ হয়েছে জেনে পরিকল্পনামন্ত্রী এটাকে ‘বিশাল ব্যাপার’ বলে উল্লেখ করেন। প্রস্তাবিত বাজেট প্রসঙ্গে এম এ মান্নান বলেন, ‘কঠিন সময়ে এ বাজেট করা হয়েছে। তবে নাগরিক হিসেবে আমি সুখী বোধ করি। সরকারের যেহেতু মন্ত্রী আছি, একমত হয়েই আছি। আমার ভিন্নমত থাকতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে আছেও। তবে ভিন্নমত ছাপিয়ে গেছে ঐকমত্যে।’
১২টি বছর চমৎকার কাটলেও কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ উন্নয়নকে কিছুটা পিছিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন এম এ মান্নান। মাঝখানে অবশ্য ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে কিছু ভয়ংকর দিন ছিল বলেও স্মরণ করেন তিনি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতকে বড় করা হয়েছে। উপকারভোগীর ভাতা বাড়ানো হয়েছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
অর্থনীতিতে তিন-চতুর্থাংশই গ্রামের অবদান উল্লেখ করে এম এ মান্নান বলেন, ‘আমি গ্রামের সন্তান। গ্রামে যাই, হাঁটি, বাজারে যাই, মাঠে যাই, হাটে যাই। গাড়ি নিয়ে যখন যাই, রাস্তার পাশে থেকে দেখি মা-বোনেরা কাজ করছেন।’
ভর্তুকির ধারণা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসতে হবে মন্তব্য করেও পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সরকার কৃষি খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখবে।
আর প্রযোজ্য ক্ষেত্রে কর শনাক্তকরণ নম্বরধারীদের (টিআইএন) কাছ থেকে দুই হাজার টাকা কর নেওয়ার পদ্ধতিরও পক্ষে তিনি। তিনি বলেন, মানুষকে কর দেওয়ার অভ্যাস তৈরিতে এটি সাহায্য করবে।
এম এ মান্নান বলেন, সবার জন্য নয়, বরং কয়েকটি সেবার বিপরীতে দুই হাজার টাকা করের প্রশ্নটি এসেছে। এ বিষয়ে তিনি যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সময়ের একটি ঘটনা মনে করেন। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, থ্যাচার একবার দুধের ওপর কর বসিয়েছিলেন। ওই সময় বাচ্চারা রাস্তায় স্লোগান দিত, ‘থেচার, থেচার, মিল্ক স্নেচার (ছিনতাইকারী)।’