Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম

মদিনার মাটির নিচে সোনা ও তামার বিশাল ভাণ্ডার

সৌদি আরবের মাটিতে এবার বিপুল পরিমাণ সোনা এবং তামার মজুদ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি সৌদির মদিনায় ওই বিপুল খনিজ সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন সে দেশের ভূতাত্ত্বিকরা। এই ‘আবিষ্কারের’ জেরে দেশের খনি শিল্পের চেহারা আমূল বদলে যেতে পারে বলে মনে করছে সৌদি সরকার। তাদের আশা, এবার কোটি কোটি ডলার দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে সৌদিতে।

সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) টুইটারে সৌদি জিওলজিক্যাল সার্ভে (এসজিএস)-কে উদ্ধৃত করে এই ‘আবিষ্কারের’ কথা জানিয়েছে । এসজিএসের তরফে ‘সার্ভে অ্যান্ড মিনারেল এক্সপ্লোরেশন সেন্টার’-এর ভূতাত্ত্বিকেরা জানিয়েছেন, ওই বিপুল সোনা এবং তামার আকরিক মজুদ ছিল মদিনায়। যার হদিস আগে মেলেনি।

মদিনার আবা আল-রাহা এলাকায় আকরিক সোনা মিলেছে। অন্য দিকে, ওয়াদি-আল-ফারা অঞ্চলের আল-মাদিক এলাকার চারটি জায়গায় আকরিক তামা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। যদিও এই বিপুল খনিজ সম্পদের মোট পরিমাণ কত, তা খোলসা করেনি সৌদি সরকার।

বৃহস্পতিবার একটি টুইটে সৌদির জিওলজিক্যাল সার্ভে লিখেছে, ‘আমাদের এই আবিষ্কারের ফলে বিশ্বের দরবারে বিনিয়োগের নতুন দরজা খুলে গিয়েছে’।

সৌদির সংবাদমাধ্যম আল আরাবিয়ার রিপোর্টে দাবি, এই নতুন খনিজ সম্পদের খোঁজের ফলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা তাদের ব্যবসার ক্ষেত্র হিসাবে সৌদিকে বেছে নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর জেরে দেশের অর্থনীতির ভোল পাল্টে যাবে বলেও দাবি ওই রিপোর্টে। একই আশা প্রকাশ করেছেন সৌদি প্রশাসন।

মহানবী হজরত মোহাম্মদের ধর্মীয় এবং কর্মজীবনের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছে মদিনা। এবং সেই শহরকে ঘিরেই দেশের অর্থনৈতিক নতুন আশার আলো দেখছে সৌদি প্রশাসন। তাদের দাবি, এই বিপুল খনিজ আকরিক সম্পদের খোঁজ পাওয়ার পর এবার মদিনার আবা আল-রাহা এবং আল-মাদিক এলাকায় খনি শিল্পে বিনিয়োগের জোয়ার বইবে।

সরকারের আশা, মদিনায় ওই এলাকাগুরোতে ৫৩.৩ কোটি ডলারের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসতে পারে। অদূর ভবিষ্যতে তাতে প্রায় ৪,০০০ কর্মসংস্থান হতে পারে বলেও মনে করছে সরকার।

আল আরাবিয়ার দাবি, এই বিপুল খনিজ সম্পদের টানে নয়া উচ্চতায় পৌঁছবে সৌদির খনি শিল্প। তার জোয়ারে অনুসারী শিল্পগুলোও লাভবান হবে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকেরা।

সরকারি সূত্রের মতে, সৌদির মাটিতে প্রভূত পরিমাণ খনিজ সম্পদ রয়েছে। জানুয়ারিতে সে দেশের জিওলজিস্টস কো-অপরেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল আজিজ বিন লাবনের মতে, সৌদিতে ৫,৩০০-র বেশি জায়গায় খনিজ সম্পদের খোঁজ পাওয়া যেতে পারে।

অধ্যাপক লাবনের পর্যবেক্ষণ, আকরিক সোনা বা তামা ছাড়াও সৌদিতে বিভিন্ন ধরনের ধাতু এবং অধাতব শিলা, আলংকারিক শিলা এবং রত্ন পাথর রয়েছে। সেই সঙ্গে নির্মাণ শিল্পে ব্যবহৃত হয়, এমন ধরনের সামগ্রীও ছড়িয়ে রয়েছে এ দেশে।

মূলত তৈল এবং তৈলজাত দ্রব্যের রফতানির ওপর নির্ভর করছে সৌদির অর্থনীতি। সেই সঙ্গে খনি শিল্প থেকে বিপুল আয়েও যে দেশের কোষাগার ভরে উঠতে পারে, তা মনে করছে সৌদি সরকার।

বস্তুত, তৈল-নির্ভর অর্থনীতির পরিচিতি থেকে বেরোতে ‘ভিশন ২০৩০’ নামে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। গত জুনে আল আরাবিয়ায় একটি সাক্ষাৎকারে সেই পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে মতামত দিয়েছেন তিনি।

যুবরাজের দাবি, ‘ভিশন ২০৩০’ রূপায়ণের অঙ্গ হিসাবে শুধুমাত্র খনি শিল্পেই ৩,২০০ কোটি ডলারের বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে সৌদি সরকারের। ইতিমধ্যেই এই ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানতে নেমে পড়েছেন সৌদির শিল্প এবং খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।

‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা মারফত তৈল-নির্ভর অর্থনীতির বাইরেও পা রাখতে চাইছেন যুবরাজ। সরকারের লক্ষ্য, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিকাঠামো, পর্যটনের মতো এমন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ টানা, যে সব ক্ষেত্রে বিপুল আর্থিক সম্ভাবনা রয়েছে। সৌদির অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ফেলার জন্য এই সব ক্ষেত্রেও বিনিয়োগ টানতে চায় সরকার।

দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বিনিয়োগ টানতে বিশ্বের দরবারে নিজেদের রক্ষণশীল সামাজিক ভাবমূর্তিতে বদল আনতে চান যুবরাজ। সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্র কেনার জন্য সরকারি খরচ কমিয়ে তা শিল্পক্ষেত্রে ঢালার লক্ষ্যমাত্রাও রয়েছে সৌদি সরকারের। এই বিপুল সম্পদের খোঁজ মেলার ফলে বিনিয়োগকারীর সৌদির দিকে আগ্রহী হবেন, তা-ও মনে করছে তারা।সূত্রঃ দেশ রূপান্তর

 

Check Also

ওমরাহ থেকে ফেরার সময় নির্ধারণ করে দিল সৌদি আরব

হজ শুরুর আগে যারা ওমরাহ পালন করতে গিয়েছেন তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x