সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ধুলি ঝড়ের আঘাতে হাজারও ফ্লাইট বিলম্বিত, স্কুল বন্ধ এবং হাজার হাজার মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন আঞ্চলিক আবহাওয়ার ধরণকে বিপর্যস্ত করে তোলায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এই ধুলি ঝড় সর্বশেষ আঘাত হেনেছে সৌদি আরবে। মঙ্গলবার ধুলায় ঢেকে গেছে দেশটির রাজধানী রিয়াদ। এছাড়া দেশটির অন্যান্য শহর ঘন ধূসর কুয়াশায় আচ্ছন্ন হওয়ায় দৃষ্টিসীমা কমে গেছে এবং রাস্তায় যানবাহন চলাচল ধীর হয়ে এসেছে।
ঘন ধূসর কুয়াশায় কিংডম সেন্টারের মতো রিয়াদের দৃষ্টিনন্দন বিভিন্ন ভবন মাত্র কয়েকশ গজ দূর থেকেও প্রায় দেখা যাচ্ছে না। তবে বৈরী এই পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত কোনও ফ্লাইট বিলম্ব অথবা বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়নি।
দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সি (এসপিএ) বলছে, দেশের পূর্বাঞ্চল এবং রাজধানী রিয়াদে ধুলি ঝড়ের কারণে দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে পারে বলে সৌদির আবহাওয়া কেন্দ্র পূর্বাভাস দিয়েছে।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনার আরও পশ্চিমেও ধুলিময় পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় রিয়াদের মহাসড়কে ইলেক্ট্রনিক সংকেত মেনে গাড়ির গতিসীমা কমানোর জন্য চালকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।
রিয়াদের মধ্যাঞ্চলের বাসাবাড়ি, বিভিন্ন ভবন এবং যানবাহন ধুলায় ঢেকে গেছে। এসব পরিষ্কার করতে বাসিন্দাদের রীতিমতো লড়াই করতে হচ্ছে।
সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো প্রায়ই ধুলি ঝড়ে আক্রান্ত হচ্ছে। ইরাক এপ্রিলের মাঝামাঝি থেকে আটটি ধুলি ঝড়ের সম্মুখীন হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মাটির ক্ষয়, তীব্র খরা এবং কম বৃষ্টিপাতের কারণে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে এই প্রাকৃতিক দূর্যোগ দেখা দিয়েছে।
সোমবার ইরাকের সর্বশেষ ধুলি ঝড়ে দেশটির রাজধানী বাগদাদ কমলা আভায় ঢেকে যায়। এসময় কমপক্ষে ৪ হাজার জন শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ইরাকজুড়ে বিমানবন্দর, স্কুল এবং সরকারী অফিস বন্ধ রয়েছে।
ইরান মঙ্গলবার ‘অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়া’ পরিস্থিতি এবং ধুলি ঝড়ের কারণে সরকারি অফিস এবং স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে।
কুয়েতে সোমবার ধুলি ঝড়ের কারণে প্রধান বিমানবন্দরে বিমান চলাচল দেড় ঘন্টার জন্য স্থগিত ছিল এবং মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত তিনটি বন্দরে সামুদ্রিক যান চলাচল বন্ধ ছিল।
কুয়েতের শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মঙ্গলবার ক্লাস স্থগিত করা হলেও পরের দিন আবার শুরু হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে ধুলি এবং বালি ঝড় একটি স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেক ঘন ঘন ধুলি ঝড় হচ্ছে এবং এর তীব্রতাও বেড়েছে।
ভুমির অতিব্যবহার এবং বন উজাড়, নদীর পানির অত্যধিক ব্যবহার এবং নদীতে বেশি বেশি বাঁধের ফলেই এমনটা হচ্ছে।
টাইগ্রিস এবং ইউফ্রেটিস নদীতে পানি কমে যাওয়া, বার্ষিক বৃষ্টিপাতের হারে বড় ওঠানামা এবং মাটি ক্ষয়ে যাওয়ায় ধুলি ঝড় বেড়ে গেছে।
সূত্র:-দেশ রূপান্তর