ভোট ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা গেলেই গণতন্ত্র সুরক্ষিত থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশ বা অধিকার প্রয়োগ। ভোটের মাধ্যমে মানুষ সেটা প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের আদর্শের মধ্যে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যে কোনো মূল্যে কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। এ বিষয়ে দল-মত নির্বিশেষে ঐকমত্য থাকতে হবে। সেই সঙ্গে মানুষের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা গণতন্ত্র ধ্বংসের রাহু থেকে মুক্ত থাকব। পাশাপাশি স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশ আমরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারব।
শনিবার রাতে রাজধানীর শহিদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীরউত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দুই পর্বের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। প্রথম পর্বে দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু-কিশোরদের নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গল্প বলা অনুষ্ঠান হয়। এ সময় অনুষ্ঠানে ডা. জুবাইদা রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নিজের জীবনে শহিদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার মতো অনেক শিশু-কিশোরের জন্য পাথেয়। এ সময় তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
আলোচনা সভায় মুক্তিযুদ্ধে সবার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলেই সবাই সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলেও জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তারেক রহমান বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে আমরা তিনভাবে দেখতে পাই। যেটি ছিল সময়ের দাবি বা পরিস্থিতি। প্রথমত দেখছি একজন সৈনিক হিসাবে। একজন সৈনিকের প্রতিশ্রুতি দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, মাটির প্রতি। দেশকে রক্ষা করা, দেশের মানুষকে রক্ষা করা, সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা। আমরা দেখেছি, যখন সময় এসেছে স্বাধীনতা রক্ষা করা বা স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার, শত্রুর কবল থেকে দেশের মাটিকে রক্ষা করার, সেই সময় জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ করেছেন, উজ্জীবিত করেছেন মানুষকে মুক্তিযুদ্ধে এগিয়ে আসার জন্য। একজন সৈনিক হিসাবে যা দায়িত্ব তিনি তার সর্বোচ্চ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন।
তারেক রহমান বলেন, দ্বিতীয়ত একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে দেশের মানুষের কাছে ছুটে গিয়েছেন। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, তাদের সমস্যা জানতে চেয়েছেন। সমস্যার সমাধানও করেছেন। তিনি যে ১৯ দফা দিয়েছেন, তা দিয়ে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একটা পরিচয় দিয়েছেন আমরা বাংলাদেশি। যে পরিচয়ে আজ আমরা সমগ্র বিশ্বে পরিচিত। তিনি রাজনীতিবিদ হিসাবে সফল ছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিকে ধরে রাখতে পেরেছি।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহিদ জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহী। তিনি পরিবারের দিকে এবং নিজের জীবনের দিকে তাকাননি। সুতরাং কে কোথায় কী লিখল তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আইন করে আমাদের বাধ্য করা যাবে না যে, স্বাধীনতার ঘোষক অন্য কেউ।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ে শিশু-কিশোরদের শোনান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও বেবি নাজনীন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও জিয়াউর রহমানের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরে। তাদের অন্যতম আগা খান একাডেমির ছাত্র শাহরিন মো. ছোয়াদসহ কয়েকজন। পাশাপাশি মিলনায়তনের বাইরে জিয়াউর রহমানের জীবনঘনিষ্ঠ অসংখ্য ছবি পরিদর্শন করেন শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, সদস্য সচিব ড. সোহাগ আওয়াল এবং সদস্য ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, নূরুল ইসলাম মনি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রীতা, জেডআরএফের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা. পারভেজ রেজা কাঁকন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম, অধ্যাপক আবদুল করিম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমনসহ রাজনীতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যক্তিরা।
এরপর একই স্থানে দ্বিতীয় পর্বে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যাঁর গল্প আমাদের আদর্শ’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত ছিলেন জেডআরএফের প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা. জুবাইদা রহমান। অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত ও মুনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক ড. মো. ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার। অধ্যাপক নাসরিন সুলতানার পরিচালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ফাহাম আব্দুস সালাম, ডা. সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী, অধ্যাপক হালিম খান, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল, মুক্তিযোদ্ধা লুতফুল হাসান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো. জামাল হোসেন মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুফলেহ আর ওসমান, প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ক ইফতেখার মাহমুদ, একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র কায়সান আহিয়ান রেজা। অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের ওপর একটি বিশ্লেষণধর্মী ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলেসের ইমিরেটাস অধ্যাপক এডি ভান ড্রিসে।
এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন, ড. শাহিদা রফিক, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, আশরাফ উদ্দিন বকুল, আফজাল হোসেন সবুজ প্রমুখ।