মালয়েশিয়ায় সাধারণ নির্বাচনে কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। ফলে ঝুলন্ত থেকে গেল দেশটির সরকারব্যবস্থা।
নতুন ফেডারেল সরকার গঠনে জোট গঠনের আদেশ দিয়েছেন দেশটির রাজা ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগং আল-সুলতান আবদুল্লাহ রিয়াতউদ্দিন আল-মুস্তফা বিল্লাহ শাহ। মঙ্গলবারের মধ্যে জোটকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী দিতে হবে।
গত শনিবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটে ক্ষমতাসীন জোট বারিসান ন্যাশনালের ভরাডুবি আর প্রধান বিরোধীদল আনোয়ার ইব্রাহিমের পাকাতান হারাপান জোট সবচেয়ে বেশি আসনে জিতলেও সরকার গঠনের মতো প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি কোনো দল।
এদিকে দুই দশকেরও বেশি সময় মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা মাহাথির মোহাম্মদ ৫৩ বছরে প্রথমবার নিজের পার্লামেন্টারি আসন খুইয়েছেন। শুধু যে হেরেছেন তা-ই নয়, ৯৭ বছর বয়সি এই রাজনীতিক তার জামানতও হারিয়েছেন। মাহাথিরের এমন হারকে ‘বিস্ময়কর’ বলা হচ্ছে।
জানা গেছে, নির্বাচনে নিজের আসনে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে চতুর্থ হন মাহাথির। এতে তার দলেরও ভরাডুবি হয়েছে। তার দল একটিও আসন পায়নি। এর আগে ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট ইউসুফ রাজার কাছে হেরেছিলেন মাহাথির।
দ্বিতীয়বারের এই পরাজয়কে তার সাত দশকের রাজনৈতিক জীবনের ইতি হিসাবে দেখা হচ্ছে। জামানত ধরে রাখতে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পেতে হতো মাহাথিরের; অথচ তিনি পেয়েছেন ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, সাকুল্যে মাত্র ৪ হাজার ৫৬৬ ভোট।
লংকাউয়ির ওই আসন জিতেছেন আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিনের পারিকাতান অ্যালায়েন্সের প্রার্থী মোহাম্মদ সুহাইমি আবদুল্লাহ। তিনি পেয়েছেন ২৫ হাজার ৪৬৩ ভোট, দ্বিতীয় হওয়া বারিসান ন্যাশনালের আরমিশাহ সিরাজ পেয়েছেন ১১ হাজার ৯৪৫ ভোট। ২০১৮ সালে এই আসনে মাহাথির পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৫২৭ ভোট, মোট ভোটের ৫৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সেবার তার বিরুদ্ধে বারিসান ন্যাশনালের প্রার্থী পেয়েছিল ২৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোট।
এদিকে নির্বাচনে আনোয়ার ইব্রাহিমের পাকাতান হারাপান ২২২ আসনের পার্লামেন্টের ৮২টি আসনে জয় পেয়েছে। তাদের পেছনে রয়েছে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পারিকাতান ন্যাশনাল পার্টি। তারা পেয়েছে ৭৩টি আসন। প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুবের ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল জোটের ভরাডুবি হয়েছে। তারা পেয়েছে মাত্র ৩০টি আসন।
স্বাধীনতার পর ছয় দশক ধরে মালয়েশিয়া শাসন করা বারিসানের এমন ভরাডুবি মালয়েশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রে বড় ধরনের বদলেরও ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভোটের আগে জনমত জরিপে আনোয়ারকে এগিয়ে রাখা হলেও মুহিউদ্দিনের জোটের অভাবনীয় ফলও অনেককে চমকে দিয়েছে।
মাহাথির ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে ৯২ বছর বয়সে তিনি পুনরায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন। এই দফায় অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে তার সরকারের পতন ঘটে। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে তিনি পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে গিনেস ওয়ার্ল্ড বুকে নাম লিখিয়েছিলেন তিনি।