মালয়েশিয়ায় বিদেশি কর্মীদের বৈধতা দেয়ার নামে ভিসা জালিয়াতি ও অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জনে জড়িত থাকার দায়ে বাংলাদেশিসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তর করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে ৪জনই বাংলাদেশি। এক বাংলাদেশির নেতৃত্বে ভিসা জালিয়াতি করে আসছিল গ্রেপ্তারকৃতরা।
গ্রেপ্তারদের ১৪দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তারকৃতদের নাম পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
শুক্রবার (১০ জুন) সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়া অভিবাসন বিভাগের মহা মরিচালক দাতুক সেরি খায়রুল দাজাইমি দাউদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে বুধবার (৮ জুন) রাজধানী কুয়ালালামপুরে পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে মালয়েশিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ ভিসা জালিয়াতি সিন্ডিকেট চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী এক বাংলাদেশি (৪২)। তিনি মালয়েশিয়ার একজন স্থায়ী বাসিন্দাও (মাইপিআর)। চলমান রিক্যালিব্রেশন প্রোগ্রাম (আরটিকে) থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা। বাংলাদেশি ওই ব্যাক্তি এই অবৈধ কার্যকলাপ করে দুই মিলিয়নেরও বেশি অর্থ আয় করেছে বলে ধারণা করছে অভিবাসন বিভাগ।
অভিবাসন বিভাগের মহাপরিচালক দাতুক সেরি খাইরুল দাজাইমি দাউদ বলেন, গত ৮ জুন কুয়ালালামপুরের জালান লুমুত এবং আমপাংয়ের পান্ডান জায়াতে অপ খাসের অধীনে গোয়েন্দা ও বিশেষ শাখার মাধ্যমে দুটি অভিযান পরিচালনা করা হয়। জালান লুমুতে সিন্ডিকেটের প্রধান ওই বাংলাদেশি ব্যাক্তির স্ত্রীসহ একজন মালয়েশিয়ানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি ব্যাক্তিকে ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি মাইপিআর স্ট্যাটাস (অনুমতি) দেওয়া হয়েছিল।
এই সিন্ডিকেটরা অবৈধভাবে একটি নির্মাণ সংস্থা এবং একটি অবৈধ কর্মসংস্থান সংস্থা স্থাপন করে, ২০২১ সালে চালু হওয়া আরটিকে প্রোগ্রামে অবৈধ ভাবে অর্থ উপার্জন শুরু করে। দুই মাসের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে, নির্মাণ সংস্থাটি ২০১৪ সাল থেকে কাজ করছে এবং রিক্যালিব্রেসি প্রেগ্রামের অধীনে বিদেশী কর্মীদের প্রতি আবেদনের জন্য সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ রিঙ্গিত করে চার্জ করে এজেন্ট হিসাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল।
এছাড়া পান্ডান জায়াতে একজন ৩৬ বছর বয়সী স্থানীয় মহিলা এবং তার স্বামী, একজন বাংলাদেশি, মালয়েশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী ভিজিট পাসধারী ব্যাক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া আরোও দুজন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যারা কোম্পানি এবং গ্রাহকদের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে আসছিল।
দুটি অভিযানে, বাংলাদেশের ৪৫৭, ইন্দোনেশিয়ার ৮, ভারতের ৮, পাকিস্তানের ৮, মিয়ানমারে ৬ এবং নেপালের ১ টি পাসপোর্ট সহ মোট ৪৮৮টি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও অভিযান চালিয়ে ১২টি কোম্পানির সিল, দুটি কম্পিউটারের সেট এবং নগদ ৩৮ হাজার ৩০৮ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত জব্দ করা হয়েছে। আরোপকৃত ফি এবং জব্দ করা পাসপোর্টের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে এই সিন্ডিকেটটি ২ মিলিয়নেরও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে ধারণা করছে অভিবাসন বিভাগ।
অভিবাসন বিভাগের মহা পরিচালক আরও জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারকৃতদের ১৪ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে এবং অভিবাসন আইন ১৯৫৯/৬৩ এবং ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৫ এর পাশাপাশি পাসপোর্ট আইন ১৯৬৬ এর ধারা ১২(১)(এফ) এর অধীনে আরও তদন্ত করা হবে।