মিরপুরে স্মৃতিকাতরতা টেস্টের রজতজয়ন্তী উদযাপন করল বিসিবি
জমকালো আয়োজনে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্লাজায় টেস্ট ক্রিকেটের রজতজয়ন্তী উদযাপন করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা লাভের ২৫ বছর পূর্তি হয়েছে গতকাল। দিনটিকে বিশেষভাবে পালনের জন্য বিসিবি আয়োজন করেছিল জমকালো অনুষ্ঠানের। যে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন দেশের প্রথম টেস্ট স্কোয়াডের সদস্যরা। যারা ২০০০ সালের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলে ইতিহাস গড়েছিলেন। তাদের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের অভিজাত টেস্ট যাত্রা। অনুষ্ঠানে অভিষেক টেস্ট স্কোয়াডের ১৬ সদস্যের জন্য সংবর্ধনার আয়োজন করা হলেও নানা কারণে রজতজয়ন্তী উৎসবে উপস্থিত থাকতে পারেননি পাঁচজন সাবেক ক্রিকেটার। তাদের মধ্যে ছিলেন- বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়, সাবেক সহ-অধিনায়ক আকরাম খান, উইকেটরক্ষক-ব্যাটার খালেদ মাসুদ পাইলট, সাবেক পেসার মঞ্জুরুল ইসলাম এবং নিউজিল্যান্ড প্রবাসী আল শাহরিয়ার রোকন। যদিও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স ম্যানেজার শাহরিয়ার নাফীস আগের দিন নিশ্চিত করেছিলেন দুর্জয়সহ ১৬ জনকেই আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
কাল বিকালে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের মিডিয়া প্লাজায় অভিষেক টেস্টের ১১ ক্রিকেটারের (দুর্জয়, আকরাম, পাইলট, রোকন ও মঞ্জু ছাড়া) পাশপাশি সংর্বধনা পেলেন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার ও প্রধান কোচ। তাদের সবাইকে বটল গ্রিন ব্লেজারও উপহার দেয়া হয়। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় তার সঙ্গে আরও ছিলেন যুব ও ক্রীড়া সচিব মো, মাহবুব-উল-আলম এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের (এনএসসি) সচিব মো. আমিনুল ইসলাম। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া অভিষেক টেস্টের দুই ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ, মেহরাব হোসেন অপি, ওয়ান ডাউন হাবিবুল বাশার, সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল, দুই পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত ও বিকাশ রঞ্জন দে (ধর্মান্তরিত হয়ে মাহমুদুল হাসান রানা), বাঁ হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক, রিজার্ভ বেঞ্চে থাকা থার্ড ওপেনার জাভেদ ওমর বেলিম, দ্বাদশ খেলোয়াড় রাজিন সালেহ আলম, বাঁ হাতি স্পিনার এনামুল হক মনি, অফস্পিনার ফাহিম মুন্তাসির সুমিত এবং প্রধান কোচ সারোয়ার ইমরান ও ম্যানেজার আজিজ আল কায়সার টিটোকে ব্লেজার পরিয়ে দেন। একে একে নাম ঘোষণা হচ্ছে আর যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া গর্বিত ক্রিকেটারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন সম্মাননা ক্রেস্ট এবং ফুলের তোড়া। এরপর অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটারদের নিয়ে কাটা হয় ২৫ পাউন্ড ওজনের বিশাল এক কেক। বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে কেক খাইয়ে দিলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ। বিশাল নর্থ প্লাজার একপাশে এয়ার কুলার লাগিয়ে অস্থায়ী তাবু টানিয়ে প্যান্ডেলে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠান। অভিষেক টেস্টের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফ ছাড়াও বিসিবি পরিচালক মাহবুব আনাম, নাজমুল আবেদিন ফাহিম, ইফতিখার রহমান মিঠু, ফাহিম সিনহা, মঞ্জুরুল আলমও উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
এছাড়া জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান এবং গাজী আশরাফ হোসেন লিপুও এসেছিলেন। আরও এসেছিলেন নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জোতি। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিবি সভাপতি এবং বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের অন্যতম সদস্য, প্রথম সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল। প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এরপর আয়োজিত হয় অনুষ্ঠানের বাকি আনুষ্ঠানিকতা।
বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সোনালি একটি দিন ২৬ জুন, ২০০০ সাল। এদিন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে স্বীকৃতি পেয়ে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়। এই তারিখে দশম টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় আইসিসি। লন্ডনের লর্ডসে আইসিসির বোর্ড সভা থেকে ঘোষিত সেই স্বীকৃতি ছিল কোটি বাঙালির ক্রিকেট স্বপ্নের জয়গান। এরপর একই বছরের ১০ থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির দিন হিসেবে একে একে কেটে গেছে ২৫টি বছর। কাল সেই ঐতিহাসিক মাইলফলকের দিনের রজতজয়ন্তী উৎসব বিশেষভাবে পালন করার চেষ্টা করেছে বিসিবি। আরও বেশ কয়েকদিন আগে থেকে ‘বাংলাদেশ, সেলিব্রেটিং ২৫ ইয়ার ইন টেস্ট ক্রিকেট’ শিরোনামে বিভাগীয় শহরগুলোতে নানা আয়োজনে রজতজয়ন্তী উদযাপন করে আসছিল। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার মাইলফলকের দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে কেন্দ্রীয় আয়োজন রাখা হয় হোম অব ক্রিকেট, মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে।