মো.আহসানুল ইসলাম আমিন, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক:
মুন্সিগঞ্জ জেলার পাইকারী ও খুচরা মাংস বিক্রির দোকানগুলোতে ব্যবসায়ী ও কষাইদের কারসাজির কারণে গরু ও খাসির মাংস কিনে মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ জানিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী । তারা জানান, মাংসের দোকানগুলোতে ওজনে কারচুপি, ওজন বাড়াতে পানি মেশানো ও বকরি জবাই করে খাসির মাংস হিসেবে বিক্রি করাসহ নানা অনিয়ম এখন নিয়মে পরিনত হয়েছে। খুচরা বাজারে এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু পাইকারিতে তা বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫৪০ টাকায়। আর পাইকারির এই সেবা পাচ্ছেন শুধুমাত্র খুচরা ব্যবসায়ীরা। পাইকারি ও খুচরার এমন আকাশ-পাতাল পার্থক্যের কারণ পানি। বিশেষ কায়দায় মাংসে পুশ করিয়ে বাড়ানো হয় ওজন। এক কেজি মাংসে দেড়শো গ্রামের বেশি পানিই ঢুকানো হয়। এর ফলে প্রতারিত হচ্ছেন মানুষ। অধিকাংশ মাংস বিক্রেতারা নিজেরা গরু জবাই না করে পাইকারদের কাছ থেকে গরু ও খাসির মাংস কিনে এনে বিক্রি করেন। আর পাইকারদের কাছ থেকে কিনে আনা মাংসেই পানি থাকে বেশি। এছাড়াও কষাইরা দোকানে মাংস ঝুলানোর আগেও বার বার পানিতে চুবিয়ে দোকানে ঝুলায়। সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত এসব মাংসে পানি থাকে। বিকেল বা সন্ধ্যা হলে মাংসে থাকা পানির পরিমান কমে। মাংস বিক্রির রহস্য জানতে দুই সাপ্তাহের অনুসন্ধানে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে থাকা মাংস বিক্রির দোকানে প্রতারণার চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
ব্যবসায়ীরা দিনের বেলায় গরু জবাই করেন না। গরু জবাই শুরু হয় রাত তিনটায়। তাদের এই কর্মযজ্ঞ চলে ভোর পর্যন্ত। জবাইয়ের পর চামড়া খালাস করে ভুড়ি বের করে নেওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় মূল প্রতারণা । গরুর হৃদপিণ্ডে সংযুক্ত আর্টারি বা ধমনীর যে নালি আছে সেখানে সরাসরি পাইপ দিয়ে পানি দেওয়া হয়। সে পানি পৌঁছে যায় গরুর শরীরের প্রতিটি ধমনীতে। একইভাবে পানি প্রবেশ করানো হয় গরুর হৃদপিন্ডে সংযুক্ত ভেইন বা শিরায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাংস বিক্রেতা জানান, শিরা ও উপশিরায় (ধমনী) পানি প্রবেশ করালে তা দীর্ঘ সময় মাংসের ভেতরে থেকে যায়। এভাবে পাঁচ মণ ওজনের একটি গরুর শরীরে বাড়তি এক মণ পানি ঢুকানো যায়। কয়েক মিনিট ধরে যে গরুগুলোতে পানি ঢুকানো হয় ওই গরুর মাংস পাইকারি বিক্রি হয় ৪৮০ টাকা কেজি দরে।
প্রত্যাক্ষদর্শী রা জানান, শুধু গরু নয়, এখন হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ছাগলের মাংসেও একই কায়দায় পানি দিয়ে বিক্রি করছেন দোকানিরা। ব্যবসায়ীরা ভোর হওয়ার আগেই গরু জবাই করে, মাংসে পানি ঢুকায়। যারা পাইকারি নেয়, তারাও ভোরে চলে আসে। যারা সকালে যাবে তারা কিছুই বুঝতে পারবেনা । তবে যেসব কষাই নিজেরা গরু জবাই করেন তাদের থেকে মাংস কিনতে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ আজকাল অনেক মাংস বিক্রেতা অনৈতিক পন্থায় মাংস বিক্রি করছেন। খুচরা বাজারে খাসির মাংসের নামে বিক্রি হচ্ছে বকরির মাংস। সেখানেও পানি আর ওজনে কারচুপি রয়েছে। এক কেজি গরুর মাংসের বর্তমান বাজার মূল্য ৭০০ টাকা। ব্যবসায়ীদের প্রতারণার কারণে ভোক্তার কাছে যে মাংস পৌঁছায়, তার ছয় ভাগের এক ভাগ থাকে পানি। অর্থাৎ প্রতি কেজি মাংসে দেড়শো গ্রামের বেশি পানি। যার মূল্য দাঁড়ায় ১০৫ টাকা। আর ছাগলের মাংসের ক্ষেত্রে দেড়শো গ্রামের দাম আসে দেড়শো টাকা। অভিনব কৌশলে ভোক্তাকে ঠকিয়ে চলেছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।
তবে সচেতন ক্রেতারা বলছেন, জেলার মাংস বিক্রির দোকানগুলোতে ওজনে কারচুরি, গরুর মাংসের জবাই প্রক্রিয়া, গরু কিংবা খাসিটি কি রোগাক্রান্ত কিনা, মাংসে পানির উপস্থিতির পরিমান যাচাইসহ ভোক্তারা যাতে প্রতারিত না হন সেই বিষয়টির উপর নজরদারি বৃদ্ধি করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর এই বিষয়টিতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করবে। এমনটাই প্রত্যাশা করেছেন সচেতন ক্রেতাগন। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুস সালাম বলেন, মাংসে পানি ঢুকানো, ওজনে কম দেয়াসহ এই ধরনের কাজ কেউ করে থাকে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।