মো. আহসানুল ইসলাম আমিন , সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
মুন্সিগঞ্জ জেলার সর্বত্র এখন আলু রোপনের কর্মযজ্ঞ চলছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও স্থাণীয়রা। তারা জানান, এবছর অনেক আগে বর্ষার পানি চলে যাওয়ার কারণে কৃষকরা ইতোমধ্যে শীকালীন আগাম সবজি ও প্রধান অর্থকরি ফসল আলু রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভোর সকাল থেকে জমি পরিস্কার শ্রমিক নিয়ে আলুর জমি পরিস্কার। পাওয়ার টিলার দিয়ে জমিতে চাষ, জমিতে সার ছিটানো, আলু রোপন । রোপনের পর আলুর জমি খড়কুটো দিয়ে ডেকে দিচ্ছেন। আলুর জমি গবাদিপশু কিংবা অন্যান্য কারনে যাতে ক্ষতিগ্রস্থ্য না হয় সেজন্য জমির চারপাশে দিচ্ছেন ফসল সুরক্ষার বেঁড়া। বর্ষার পানি বহু আগে চলে যাওয়ার কারণে এবছর বহু কৃষক তাদের জমিতে আগাম আলু রোপনের কাজটি সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে উঁচু নিচু সব ধরনের জমিতে আলু রোপনের সকল প্রস্ততি নিচ্ছেন কৃষকরা। কিস্তীর্ণ কৃষি জমিতে কৃষকরা এখন জমি পরিস্কার, চাষ দেয়া এবং জমিতে সার ছিটানোর কাজটি করছেন। এসব জমিতে কৃষকরা আলু রোপন অব্যাহত রেখেছেন। আগামী আরো ১ মাস চলবে তাদের এই আলু রোপনের কর্মযজ্ঞ ।
কৃষকরা আরো জানান, কৃষকরা শ্রমিক নিয়ে যে আলুর বীজ রোপন করছেন সেই আলুর বীজ বাড়ীতে বসে কেটে দিচ্ছেন নারীর। শুধু তাই নয়, আলু কাটা শ্রমিকদের দিতে হয় নগদ টাকা অথবা আলুর বীজ ব্যতিত আলুর অবশিষ্ট অংশ। স্থানীয়দের ভাষায় এটাকে কাটা আলু বা গোস্ত বলে। বীজ আলুগুলোর যেস্থানে অংকুর বা চোখ আছে সেটাকে আলাদা করার পর আলুর যে বাকী অংশ থাকে সেটার দামও বেশ ভালো। খাবার আলু হিসেবেই সেটা বাজারে বিক্রি করে দেয়া হয়। স্থাণীয়দের ভাষায় কাটা আলুকে গোস্ত আলু বলা হয়।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষি জমিতে ঘুরে দেখা গেছে, কৃষকরা এখন আলু রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জমিতে থাকা ধান ধরে তোলার পর জমি পারিস্কার, জমিতে চাষ দিয়ে আলু রোপনের উপযোগী করা, জমিতে সার ও আগাছা ধবংস করার জন্য কীটনাশক স্প্রে করছেন। অনেক কৃষক আগাম আলু রোপনের পর জমিতে পরিচর্যার কাজ করার পাশাপাশি একের পর এক জমিতে রোপন করছেন আলু ।
আলু চাষিদের সাথে কথা হলে তারা জানান, গত বছর বৃষ্টির কারণে জমিতে রোপন করা আগাম আলু বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। পরবর্তী একই জমিতে আবারও আলু রোপন করতে হয়েছে। যার কারণে গত বছর আগাম আলুতে লোকসান গুনতে হয়েছে। এবছর কৃষকরা পুরো দমে আলু রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের আলু রোপনের এই কর্মযজ্ঞ চলবে আরো ১ মাস। কৃষকদের অভিযোগ, বর্তমান বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা বীজ ও কীটনাশকের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। খুচরা বাজারে সারের দোকানিরাও বাড়িতি দামে বিক্রি করছেন। বাজারে কৃষি উপকরন, বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম নিয়ন্ত্রণে না রাখতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাবে। তাতে কৃষকরা তেমন একটা লাভবান হতে পারবে কি পারবে না এ নিয়ে বেশ কঙ্কিত তারা।
আলু চাষি খাদেম আলী ফকির জানান, আগাম আলু রোপনের কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন উঁচু নিচু সব ধরনের জমিতে আলু রোপনের উপযোগী হওয়াতে পুরোদমে আলু রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছি। জেলার বাইরে থেকে শ্রমিকরা এসে জমিতে আলু রোপনের কাজটি করছেন। তাদের কারণে কৃষি কাজে কৃষকদেরকে শ্রমিকের জন্য বেগ পেতে হচ্ছেনা। তিনি আশাবাদি এবছর আবহাওয়া অনূকুলে থাকলে বা কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে না পড়লে আগাম আলুসহ অন্যান্য আলু রোপনে চাষিরা শতভাগ লাভবান হবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- পরিচালক মো. খুরশীদ আলম জানান, জেলায় চলতি বছরে ৩৫ হাজার ৭৯৬ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদের লক্ষ্য মাত্র ধরা হয়েছে। যা গত বছরের সমান পরিমান জমি। এবছর আলু উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ ৯৭ হাজার ১৪৭ মে.টন। আলু উৎপাদনে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে সব ধরনের কৃষি পরামর্শসেবা দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।