ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বরিশালসহ দক্ষিণ উপকূলে সোমবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া।
আবহাওয়া বিভাগ বলছে, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, সিত্রাংয়ের গতিপথ আপাতত বরিশালের দিকে। তবে আশার কথা হচ্ছে, রোববার (২৩ অক্টোবর) রাত থেকেই থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে এবং সোমবার সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। ফলে এই ঝড়ের তীব্রতা কমার আশা করা হচ্ছে।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আনিসুর রহমান বলেন, ঝড়টির গতি যদিও বরিশালের দিকে, তবে বৃষ্টির কারণে এর শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। ফলে খুব প্রবল শক্তি নিয়ে এটি আঘাত করার আশঙ্কা কম, তবে বৃষ্টি বাড়তে পারে। সেই সঙ্গে হতে পারে উঁচু উচ্চতার জোয়ার।
বরিশাল আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে উপকূলীয় বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ও ভোলা জেলা। তবে এখন এটি সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা কম। কারণ, প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া বায়ুমণ্ডলে সেই অবস্থা নেই। রোববার রাত ৯টা থেকে সোমবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ১৫৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। আর গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩২ মিলিমিটারের বেশি। এ সময় ঘণ্টায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ৪৫ কিলোমিটার। এতে এই অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থমকে গেছে।
বরিশাল নদী বন্দরকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রাখতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।
রোববার রাত ৯টা থেকে সোমবার দুপুর তিনটা পর্যন্ত ১৫৫.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ উচ্চ পর্যবেক্ষক মাসুদ রানা রুবেল।
তিনি জানান, আগামী দুই-তিন দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ফলে উপকূলীয় অঞ্চলে ৫-৮ ফুট পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। উপকূলে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে। টানা বৃষ্টিতে উপকূলের ঘরবাড়ি ও গাছপালার মাটি নরম হওয়ায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিআইডব্লিউটিএ-এর বরিশাল নৌবন্দর ও পরিবহন বিভাগের উপপরিচালক আবদুল রাজ্জাক জানান, বরিশাল নৌবন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত থাকায় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
এদিকে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতি নিয়েছে বরিশালের সব জেলা ও উপজেলা। এর মধ্যে বিভাগের ৩ হাজার ৯৭৪টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কেন্দ্রের (সিপিপি) স্বেচ্ছাসেবকদের মাঠে নামানো হয়েছে। তারা সংকেত প্রচার করছেন। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান সমন্বিতভাবে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে।
বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. আমিন উল আহসান বলেন, সরকারি সব প্রতিষ্ঠানকে ঝড় মোকাবিলায় সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। একই সঙ্গে গবাদিপশু আশ্রয়ের জন্য মুজিব কেল্লাগুলোও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার এবং ওষুধের ব্যবস্থাসহ সব প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সিপিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোকে।
ঝড় মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শাহবুদ্দিন মিয়া।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। এই মুহূর্তে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি বরিশালেও ৭ নম্বর সংকেত চলছে।
তিনি বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি, সিপিপির সব সদস্য বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীরা প্রস্তুত রয়েছে।
তিনি আরো জানান, সিপিপির ৩২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছা সেবক প্রস্তুত রয়েছে। তারা মাইকিং করে লোকজনকে নিরাপদে যাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ইতিমধ্যে যে সব ইউনিয়নে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে তাদের স্থানীয় প্রশাসন শুকনা খাবার বিতরণ করছে।
এদিকে দিনভর বৃষ্টিতে বরিশালের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শহরের বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউই বাইরে বের হচ্ছে না।