Saturday , 20 April 2024
শিরোনাম
Birds couple escaping from the cage. Freedom concept. Released to nature

মুসলিম জীবনে স্বাধীনতার ব্যাপ্তি

মুনশি আমিনুল ইসলাম:

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। প্রত্যেক মানুষ চায় স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে, স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে। তাই স্বাধীনতাকে খর্ব করার অধিকার কারো নেই। এ অধিকার খর্ব করা যেমন মানবাধিকার পরিপন্থী; তেমনি মহান আল্লাহর আইনের বিরোধীও বটে। স্বাধীনতা মহান আল্লাহ প্রদত্ত এমন এক আমানত, যা আল্লাহ তায়ালা আমাদের দান করেছেন। অমূল্য এ আমানত রক্ষার ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা ও বিশ্বাসঘাতকতা মোটেই কাম্য নয়।

উন্নত সমাজ ও জাতি গঠনে স্বাধীনতার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম যখন স্বাধীনতাকে তার মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করে তখন সময়টি ছিল এমন যে, অধিকাংশ মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক, রাজনৈতিক, সামাজিক, ধর্মীয় এবং অর্থনৈতিকভাবে আক্ষরিক অর্থেই ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিল। মানুষের এই বহুরূপ দাসত্ব-শৃঙ্খলের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতা ঘোষণা করল। বিশ্বাসের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা এবং সমালোচনার স্বাধীনতাসহ সব ক্ষেত্রেই ইসলাম স্বাধীনতা দিয়েছে। আর চিরকাল ধরে এসব বিষয়েই মানুষ তাদের স্বাধীনতা প্রত্যাশা করে আসছে।

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল। তাই ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের পতাকা ওড়ানোর দিন। ইতিহাসের পৃষ্ঠা রক্তে রাঙিয়ে, আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করে যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বাঙালি, দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন তার চূড়ান্ত পরিণতি। পাকিস্তানি শোষণ, নির্যাতন ও নিপীড়নের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য স্বাধীনতার সংগ্রামে এ দেশের জনগণ জীবনবাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ইসলাম যে দেশপ্রেম তথা মাতৃভূমির জন্য যুদ্ধের কথা বলেছে, এই যুদ্ধ ছিলো সেই চেতনারই শামিল।

ইসলাম রক্তপাত, হানাহানি-মারামারি, হত্যা অথবা ইসলাম গ্রহণে জবরদস্তির অনুমোদন দেয় না। তবে অন্যায়, হত্যা, স্বাধীনতা হরণ প্রতিরোধে যুদ্ধ করতেও নির্দেশ দেয়। কোনো জুলুমকেই প্রশ্রয় দেয় না ইসলাম। জালিমদের খপ্পর থেকে মুক্ত ও স্বাধীন করতে লড়াই করার তাগিদ দিয়ে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কী হলো যে, তোমরা যুদ্ধ করবে না আল্লাহর পথে এবং অসহায় নর-নারী এবং শিশুদের জন্য যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এই জনপদ-যার অধিপতি জালিম, তার থেকে আমাদেরকে অন্যত্র নিয়ে যাও, তোমার নিকট থেকে কাউকে আমাদের অভিভাবক কর এবং তোমার নিকট থেকে কাউকেও আমাদের সহায় কর।’ (সুরা নিসা :৭৫)

জুলুম ও শোষণমুক্ত, আল্লাহদ্রোহী মানসিকতামুক্ত স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার পাশাপাশি রাষ্ট্রকে কল্যাণরাষ্ট্রে অক্ষুণ্ণ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। কেননা স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা অধিক কঠিন। তাই তো আল্লাহ আদেশ করেছেন, ‘তোমরা সর্বদাই তোমাদের শত্রুদের প্রতিহত করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে সাবধান থাকবে। এই প্রস্তুতি দ্বারা তোমরা তোমাদের এবং আল্লাহর দুশমনদের ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখবে।’ (সুরা আনফাল :৬০)

প্রিয় নবিজির (সা.) জীবনাদর্শ ও স্বভাব-চরিত্রে দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। তিনি মাতৃভূমি মক্কাকে অত্যন্ত ভালোবাসতেন। তাই স্বজাতি কর্তৃক নির্যাতিত হয়ে জন্মভূমি মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতকালে বারবার মক্কার দিকে ফিরে তাকিয়ে কাতর কণ্ঠে আফসোস করে বলেছিলেন, ‘হে আমার স্বদেশ! আমি তোমাকে ছেড়ে যেতাম না। যদি না আমাকে বাধ্য করা হতো।’

ইসলাম স্বাধীনতায় বিশ্বাসী হলেও সে স্বাধীনতা বল্গাহীন স্বাধীনতা নয়। সে স্বাধীনতা কিছু বিধি-নিষেধ দ্বারা সুনিয়ন্ত্রিত। ইসলামে স্বাধীনতা হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করে দেশ ও জাতির জন্য কাজ করা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বলো, আমার নামাজ, আমার ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে।’ (সুরা আনআম :১৬২)

ইসলাম মানুষকে রাজনীতি করার অধিকার দিয়েছে, কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বৈরতান্ত্রিকতাকে মোটেও প্রশ্রয় দেয়নি। দলের ঊর্ধ্বে উঠে ছোট-বড়, ধনী-নির্ধন, দুর্বল-সবল সকলের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আমি তো তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করো।’ (সুরা নিসা :১০৫)

ইসলাম মানুষকে বৈধভাবে জৈবিক চাহিদা পূরণ করার অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু জেনা-ব্যভিচারকে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, নিশ্চয় এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল :৩২) এমনিভাবে ইসলাম মানুষকে পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দিয়েছে, তবে অশালীন পোশাক পরিধানে বারণ করেছে। ইসলাম মানুষকে অর্থ উপার্জনের স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্তু অবৈধ পথ পরিহারের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে, ‘নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করবে।’ (সুরা জুমা :১০)

ইসলাম বৈধভাবে অর্থ ভোগের স্বাধীনতা দিলেও অর্থনৈতিক বৈষম্য রোধে ধনীদের সম্পদে একচ্ছত্র ভোগাধিকার দেয়নি। বলা হয়েছে, ‘তাদের ধন-সম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক।’ (সুরা জারিয়াত :১৯) অর্থ উপার্জনে ইসলাম ব্যবসাকে বৈধ করলেও সুদকে চিরতরে হারাম ঘোষণা করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা বাকারা :২৭৫)

এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে আমরা বুঝলাম, ইসলাম শোষণমুক্তির কথা বলে। মানুষের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হয়ে সবাইকে আল্লাহর কাছে সমর্পিত হতে বলে। কাজেই মুসলমানের প্রকৃত মুক্তি ও সফলতা হলো পরকালীন মুক্তি ও সাফল্য। যেকোনো কাজে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সা.) অবাধ্য না হওয়া পর্যন্তই মুসলমানদের স্বাধীনতা রয়েছে।

Check Also

অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হবে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানিয়েছেন, দেশে প্রতিষ্ঠিত গণমাধ্যমের অনলাইন, অনলাইনের জন্য নিবন্ধিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x