যানজট দখল আর অপরাধে জর্জরিত শিমুলিয়া, কোনাপাড়ায় উত্তপ্ত আলোচনা সভায় তোলপাড়
শিমুলিয়া ইউনিয়নের কোনাপাড়ায় মঙ্গলবার সকালটা অন্যদিনের চেয়ে একটু ভিন্ন ছিল।
দারুল উলুম আলিম মাদ্রাসার হলরুম যেন এক টুকরো সংসদ— অটোচালক থেকে ওসি, ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক, সবার কণ্ঠে একটাই দাবি— “এই দখল, এই যানজট, এই অপরাধ আর নয়!”
জনসচেতনতা ও সমাধানমুখী এই সভায় এমন উত্তাপ ছড়িয়েছে যে, মুহূর্তে সেটি পরিণত হয় এক গণআন্দোলনের সূচনাবিন্দুতে।
ওসির হুঁশিয়ারি: “অপরাধীদের জায়গা জেলে, রাস্তায় নয়!”
প্রধান অতিথি আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম. হাননান সরাসরি সতর্ক বার্তা দেন—
“মাদক, কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ— কেউ ছাড় পাবে না। সমাজকে রক্ষা করতে হলে সবাইকে একসাথে নামতে হবে। পুলিশ একা যুদ্ধ জিততে পারে না।”
তিনি বলেন,
“যানজট এখন শুধু রাস্তার সমস্যা নয়, এটা মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে। অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে স্কুলগামী শিশু— সবাই ভোগান্তির শিকার। এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যত ভয়ংকর হবে।”
ওসির বক্তব্যে হলরুমে মুহূর্তেই নীরবতা নেমে আসে— সবাই বোঝে, কথাটা আজ শুধু বক্তৃতা নয়, হুঁশিয়ারিও বটে।
প্রশাসক কামরুজ্জামান: “সমস্যার রুট কাটবো, শুধু পাতা ছাঁটাই নয়”
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের প্রশাসক জনাব মো. কামরুজ্জামান।
তিনি স্পষ্ট বলেন—
“অভিযোগের সময় শেষ। এখন সমাধানের সময়। আমরা সমস্যার মূল কেটে ফেলব। জনগণ, প্রশাসন ও নেতৃত্ব এক হলে অসম্ভব কিছুই নেই।”
তার বক্তব্যে উপস্থিত জনতার করতালিতে পুরো হল কেঁপে ওঠে।
দুই দফা ঘোষণা: রাস্তায় নামছে স্থানীয় ট্রাফিক বাহিনী!
সভা শেষে ঘোষণা দেওয়া হয় দুইটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের—
1️⃣ ‘ট্রাফিক স্বেচ্ছাসেবক দল’ গঠন – স্থানীয় তরুণরা প্রতিদিন রাস্তার নির্দিষ্ট পয়েন্টে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করবেন।
2️⃣ ‘অবৈধ দখল প্রতিরোধ কমিটি’ – ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনার প্রস্তাব গৃহীত হয়।
এক কথায়, “বসন্তের সজীব হাওয়া বইছে শিমুলিয়ায়”— এমনটাই বলছেন স্থানীয়রা।
অটোচালকদের আর্তনাদ: “স্ট্যান্ড নেই, দোষ আমাদের ঘাড়ে পড়ে!”
অটোচালক ও দোকানদারদের কণ্ঠেও ক্ষোভ—
“আমাদের নির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নেই, তাই রাস্তার মাঝে দাঁড়াতে হয়। ফলে যানজট হয়, পুলিশ ধমক দেয়, যাত্রী রাগ করে। দোষ যেন সবসময় আমাদেরই!”
তারা জিরানী বাজারে স্থায়ী অটোস্ট্যান্ড ও নির্ধারিত ভাড়া তালিকা চেয়ে দাবি তুলেছেন।
রাজনীতিক-শিক্ষাবিদদের তর্ক-বিতর্কে রণক্ষেত্রের পরিবেশ
সভায় উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ—
আব্দুল্লাহ আল মামুন, মো. মোবারক হোসেন, হাজী আব্দুল মালেক, আমজাদ হোসেন বুলবুল, আব্দুল মান্নান মেম্বার, আসাদুল ইসলাম মুকুল, ফরিদ আহাম্মেদ (সোহাগ), মনির হোসেন, রাসেল আহমেদ, প্রমুখ।
কেউ বললেন, “রাজনীতি নয়, শিমুলিয়ার উন্নয়নই হোক অগ্রাধিকার।”
আবার কেউ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন, “সমস্যা চিহ্নিত করা সহজ, বাস্তবায়নেই আসল পরীক্ষা।”
একসময় করতালি, আরেক সময় তর্ক— তপ্ত হলেও আলোচনায় ছিল প্রাণ।
আয়োজকদের কণ্ঠে দৃঢ় অঙ্গীকার
সভা আয়োজন করেন
মো. মোবারক হোসেন (সাধারণ সম্পাদক, শিমুলিয়া ইউনিয়ন বিএনপি),
আব্দুল মান্নান মেম্বার (৮ নং ওয়ার্ড) এবং
সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম (দি ডেইলি অবজারভার ও এশিয়ান টিভি)।
তাদের বক্তব্যে স্পষ্ট বার্তা—
“আমরা শুধু সমস্যা নিয়ে কাঁদি না, সমাধানের পথে হাঁটি। আজকের সভা শিমুলিয়ার সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা।”
শেষে প্রতিশ্রুতির প্রতিধ্বনি
সভা শেষে প্রশাসক কামরুজ্জামান বলেন—
“আজকের সভা কেবল একদিনের অনুষ্ঠান নয়, এটা শিমুলিয়ার পুনর্জাগরণের প্রথম পদক্ষেপ। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ— শিমুলিয়াকে করব দখলমুক্ত, অপরাধমুক্ত, যানজটমুক্ত।”