রাজশাহী প্রতিনিধি;-রাজশাহী নগরীতে আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) এগুলো নির্মাণ করবে। পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মাণে নকশা প্রণয়ন এবং বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়নে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এদিকে শেষ হয়েছে নগরীর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহানগরীর মেহেরচণ্ডি এলাকায় প্রথম ফ্লাইওভারের কাজ।
রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন,প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহীতেও উন্নয়ন কাজ চলছে। রাজশাহীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আশা করি আগামীতে আরও তিন-চার হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প অনুমোদন পাবো।’
মেয়র লিটন আরও বলেন, ‘রাজশাহীকে আরও উন্নত, আধুনিক ও বসবাস উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এই নগরীতে যারা বাস করবেন, তারা গর্ববোধ করবেন। শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও শিল্পায়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী-২ ও চামড়া শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ চলছে। ২২টি পুকুর অধিগ্রহণ করে পার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে।’
‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীন তিনটি প্যাকেজে পাঁচটি ফ্লাইওভার ও ১৯টি অবকাঠামো নির্মিত হবে। এ লক্ষ্যে নকশা প্রণয়ন ও বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়নে তিনটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে– সার্ম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড, ডিজাইন প্লানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট লিমিটেড (ডিপিএম) এবং ভিস্তারা আর্কিটেক্ট (প্রা.) লিমিটেড। চুক্তিতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পক্ষে স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুর ইসলাম তুষার। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে যথাক্রমে সার্ম অ্যাসোসিয়েটের পরিচালক (অপারেশন) শেখ মাসুম মো. সালাহউদ্দিন, ডিপিএমের পরিচালক লাইক মো. মুস্তাক, ভিস্তারা আর্কিটেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা খালিদ পলাশ।
চুক্তি অনুযায়ী ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পর-১ প্যাকেজ নং এসডব্লিউ ০২ লট বি-এর আওতায় চারটি ফ্লাইওভার নির্মাণে নকশা প্রণয়ন ও বিস্তারিত প্রকৌশল নকশা প্রণয়ন করা হবে। মহানগরীর হড়গ্রাম নতুনপাড়া রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৪শ’ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। কোর্ট স্টেশন রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৫২১ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর রেলওয়ে ক্রসিংয়ের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৮৯৭ মিটার, প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। ভদ্রা রেলওয়ে ক্রসিং ফ্লাইওভারের সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ৫২০ মিটার প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এ কাজের পরামর্শক সেবা কাজের প্রতিষ্ঠান সার্ম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড এবং ডিপিএম ও জেম কনসালটেন্ট লিমিটেড (জেভি)।
প্রকল্প-২-এর আওতায় এসডব্লিউ ০২ লট সি-এর আওতায় একটি সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। মহানগরীর বর্ণালীর বন্ধ গেইট এবং নতুন বিলসিমলা রেলওয়ে ক্রসিং পর্যন্ত সমন্বিত ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হবে। এটির সম্ভাব্য দৈর্ঘ্য ১২৫৫ মিটার ও প্রস্থ ১২ মিটার। এটি নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। পরামর্শক সেবা কাজের প্রতিষ্ঠান ডিপিএম এবং সার্ম অ্যাসোসিয়েট লিমিটেড ও জেম কনসালটেন্ট লিমিটেড (জেভি)। প্রকল্প-৩ এর আওতায় এসডব্লিউ ০২ লট-ডি এর আওতায় ১৯টি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় ২, ৬, ১০, ১৩নং ওয়ার্ডে তিনতলা বিশিষ্ট ওয়ার্ড অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, দুই তলা বিশিষ্ট শেখ কামাল কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, চারতলা বিশিষ্ট সাধারণ গ্রন্থাগার, পাঁচতলা বিশিষ্ট বোয়ালিয়া অফিসার্স ক্লাব নির্মাণ, চারতলা বিশিষ্ট ধর্মসভা মন্দির উন্নয়ন, একতলা বিশিষ্ট সিটি গ্যারেজের উন্নয়ন, দুই তলা বিশিষ্ট হড়গ্রাম কাঁচাবাজার, তিনতলা বিশিষ্ট ভদ্রা কাঁচা বাজার, তিনতলা বিশিষ্ট শালবাগান কাঁচাবাজার, তিনতলা বিশিষ্ট নওদাপাড়া কাঁচার বাজার, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ, ১০টি ফুটওভার ব্রিজ, ৩০টি যাত্রী ছাউনি, ১৫টি গণ-শৌচাগার নির্মাণ। এছাড়া নগরীর আলুপট্টি মোড় থেকে তালাইমারী, সিটি বাইপাস রেল ক্রসিং থেকে কোর্ট স্টেশন পর্যন্ত, মোহনপুর ফ্লাওভার থেকে চৌদ্দপায়া চারলেন রোড, টি-বাঁধ থেকে শ্রীরামপুর হযরত শাহ মখদুম দরগা শরিফ এলাকা পর্যন্ত ল্যান্ড স্কেপিং। নতুন বিলসিমলা ও ভদ্রা ক্রসিংয়ে ল্যান্ড স্কেপিং নির্মাণ ও সৌন্দর্যবর্ধক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। ১৯টি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। পরামর্শক সেবা কাজের প্রতিষ্ঠান ভিস্তারা আর্কিটেক্ট প্রাইভেট লিমিটেড ও জেপিজেড কনসালটিং (বাংলাদেশ) লিমিটেড।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী-নওগাঁ ও রাজশাহী-নাটোর চার লেন সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নগরীর মেহেরচণ্ডি-বুধপাড়া এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের কাজ প্রায় শেষের দিকে। ২৯ কোটি ২৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৩২ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে ফ্লাইওভারটি। এই ফ্লাইওভারের নিচ দিয়েও চলে গেছে রেললাইন। আরও পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে ট্রেন পারাপারের জন্য মহানগরীর কোথাও মূল সড়কে যানবাহনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। বাড়বে শহরের সৌন্দর্য।
এদিকে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর অভ্যন্তরে যানজট কমাতে এবং বড় ও ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে আরডিএ কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের জুন মাসে নাটোর রোড (রুয়েট) থেকে খড়খড়ি বাইপাস পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভারসহ পাঁচ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। জমি অধিগ্রহণের জটিলতার কারণে ২০১৮ সালের জুন থেকে শুরু হয় নির্মাণ কাজ। যা এখনও চলমান রয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২০৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে আন্তর্জাতিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনেম লিমিটেড।
আরডিএ চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) আনওয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্মাণাধীন সড়কটি নাটোর-রাজশাহী মহাসড়ক এবং বাইপাস সড়কটির সঙ্গে সংযুক্ত। রাজশাহী-নাটোর সড়কটি মহানগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় যানজট সৃষ্টি হয়। নির্মাণাধীন সংযোগ সড়কটি চালু হলে বাইপাস দিয়ে রাজশাহী থেকে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে যানবাহন চলাচল এবং প্রবেশ করতে পারবে। ফলে যানজট কমবে। পাশাপাশি কমবে রাস্তার দূরত্বও।