বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সময় সামরিক অফিসার হত্যাকাণ্ড, বিগত বছরগুলোতে অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িতদের বিচার করা হবে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যায় যারা করেছে, তারা শাস্তি পাবে।
মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) গণভবনে জিয়াউর রহমানের সময়ে নিহত সামরিক সদস্যদের পরিবার, বিগত বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে অগ্নিদগ্ধ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন।
অগ্নিসন্ত্রাস ও জিয়ার আমলে নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমিও আপনাদের মতো একজন। আমিও একদিন শুনলাম আমার কেউ নেই। আমরা দুই বোন বিদেশে ছিলাম, এতিম হয়ে গেলাম। কী বর্বরভাবে আমার বাবা-মা, ভাই সবাইকে হারালাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনী ও আর্মি কর্মকর্তাদের নির্মমভাবে হত্যা করেছে (তারা)। আমি আমার গ্রামেও একজনকে খুঁজে পেয়েছিলাম, তার ছেলে মেয়েদের আমি দেখতাম। এরপর আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম এসব নামধাম জোগাড় করতে। শুরুতে পাওয়া কষ্টকর ছিল। পরে নামগুলো পাই।
শেখ হাসিনা বলেন, কী বর্বরবতা ১৯৭৫ সালের পর। প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, আমার ভাই, আত্মীয় স্বজনকে মারলো, এরপর জেলখানায় জাতীয় ৪ নেতাকে হত্যা করল। এরপর থেকে বার বার সেনাবাহিনীতে- মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করল। শুধু তাই নয়, আমাদের আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীকে হত্যা করল। যখন আমি অপজিশনে ছিলাম এমন দিন নেই, যেদিন লাশ টানতে হয়নি। আমাদের এত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে, তারপরও কী করে এদের পাশে লোক থাকে?
বিগত সময়ে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অগ্নিসন্ত্রাস- জীবন্ত মানুষকে কীভাবে পোড়ানো যায়। সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার। এখন দেখুন কয়েকদিন ধরে মার্কেটে আগুন। হঠাৎ করে কয়েকদিন ধরে আগুন, তারপর আমার মনে সন্দেহ হলো এটিও নাশকতা কি না। ঈদে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য করবে, সেই পথটাই বন্ধ করে দিতে চায়।
শেখ হাসিনা বলেন, অন্যায় যারা করেছে, তারা কিন্তু শাস্তি পাবে। শাস্তি পেয়েছে, পাচ্ছে, পাবে। আরও যারা বাকি আছে সেটা (বিচার) আমরা অবশ্যই করব। এরা যে অপরাধ করেছে তার বিচার হবে। দিনের পর দিন ফাঁসির ঘটনা, আমরা বিদেশে থেকেও এই খবরগুলো শুনতাম। কোন অপরাধ নেই, ধরে নিয়ে গিয়ে ফাঁসি দেওয়া। জিয়াউর রহমান তো হাসতে হাসতে মানুষের ফাঁসির রায় লিখত। কোনো বিচার ছিল না।
দেশের কল্যাণে কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমার একটাই চেষ্টা এদেশের মানুষ যেন একটু ভালো থাকে। আজকে যখন মানুষ ভালো অবস্থানের দিকে যাচ্ছে, অর্থনৈতিক ভাবে সচ্ছল হচ্ছে, সেই সময় আবার অগ্নিসন্ত্রাস, মার্কেটে আগুন, নানাভাবে মানুষের ক্ষতি করা। এটি যারা করে, এদের প্রতি জাতির ঘৃণা। আল্লাহ সহ্য করবে না।
খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সমালোচনা করে বলেন, এরা দেশের মঙ্গল চায় না, দেশের ভালো চায় না।
পরে প্রধানমন্ত্রী নিহতদের স্বজন ও অগ্নিদগ্ধদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের ঈদ উপহার দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকাণ্ড এবং বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় ক্ষতিগ্রস্তদের নিয়ে আলাদা দুটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানস্থলে সম্প্রতি আগুনে ভষ্মীভূত বঙ্গবাজারের দোকান মালিক ও কর্মচারী প্রতিনিধিদের হাতে সেখানকার দোকান মালিক ও কর্মচারীদের জন্য ঈদ উপহার দেন।