বিশ্বজুড়ে মহামারি করোনাভাইরাস থেকে পরিত্রাণ পেতে না পেতেই যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে বিরল এই রোগ মাংকিপক্স। আফ্রিকা থেকে এ বিরল রোগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, স্পেন, পর্তুগাল এবং ব্রিটেনে ছড়িয়ে পড়েছে বলে এসব দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে।
বিরল এই রোগের সর্বশেষ কেস ধরা পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। ক্যানাডায় মাংকিপক্সের ১৩টি কেসের ঘটনা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এখন তদন্ত করে দেখছে।
পর্তুগালে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ ব্যক্তি এবং স্পেনে আরও সাতজন সংক্রমিত হয়েছেন। আর ব্রিটেনে আক্রান্ত হয়েছেন মোট নয় জন।
মাংকিপক্স রোগ কী?
এই রোগ ছড়ায় মাংকিপক্স নামে এক ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে। বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। তবে এর ক্ষতিকারক প্রভাব কম। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর সংক্রমণের হারও কম। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাংকিপক্স দু’ধরনের হয়ে থাকে- মধ্য আফ্রিকান এবং পশ্চিম আফ্রিকান। ব্রিটেনে এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন যে দুই ব্যক্তি । এরা সম্প্রতি নাইজেরিয়া সফর করেছেন। এরা সম্ভবত পশ্চিম আফ্রিকা ধরনের মাংকিপক্সে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
তৃতীয় যে ব্যক্তি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি একজন স্বাস্থ্যকর্মী। তিনি রোগীদের কাছ থেকে এই ভাইরাস পেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
মাংকিপক্সের উপসর্গ কী?
এই রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হচ্ছে জ্বর, মাথাব্যথা, হাড়ের জয়েন্ট এবং মাংসপেশিতে ব্যথা এবং দেহে অবসাদ। জ্বর শুরু হওয়ার পর দেহে গুটি দেখা দেয়। এসব গুটি শুরুতে দেখা দেয় মুখে। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে হাত এবং পায়ের পাতাসহ দেহের সব জায়গায়।
এই গুটির জন্য রোগী দেহে খুব চুলকানি হয়। পরে গুটি থেকে ক্ষত দেখা দেয়। গুটি বসন্তের মতোই রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠলেও দেহে এসব ক্ষত চিহ্ন রয়ে যায়।
যেভাবে ছড়ায় মাংকিপক্স?
সংক্রমিত রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শ থেকে এই ভাইরাস ছড়ায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে, ত্বকের ক্ষত থেকে এবং নাক, মুখ ও চোখের ভেতর দিয়ে এই ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বানর, ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, এমনকি মাংকিপক্সে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত বিছানাপত্র থেকেও এই ভাইরাস অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে।
কতটা বিপজ্জনক এই মাংকিপক্স?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের প্রভাব বেশ মৃদু। এর বৈশিষ্ট্য জল বসন্তের মতোই, এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন।
কীভাবে মাংকিপক্সের প্রকোপ ঘটছে?
এই রোগ প্রথম ছড়িয়েছিল একটি বানর থেকে। এরপর ১৯৭০ সাল থেকে আফ্রিকার ১০টি দেশে মাংকিপক্সের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এই ভাইরাসে রোগী শনাক্ত হয় ২০০৩ সালে। সেটাই ছিল এই ভাইরাস আফ্রিকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ার প্রথম কেস। যুক্তরাষ্ট্রে এপর্যন্ত ৮১টি কেস ধরা পড়েছে।
মাংকিপক্সের সবচেয়ে বড় প্রকোপ দেখা দেয় নাইজেরিয়াতে, ২০১৭ সালে। সে দেশে মাংকিপক্সের প্রথম কেস ধরা পড়ার ৪০ বছর পর। এতে ১৭২ জন আক্রান্ত হন।
মাংকিপক্সের চিকিৎসা কী?
এই ভাইরাসের কোন চিকিৎসা নেই। তবে যে কোন প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায়।
গুটি বসন্তের টিকা ৮৫% কার্যকর বলে দেখা গেছে। মাংকিপক্সের জন্য এখন এই টিকাই ব্যবহার করা হচ্ছে।
মাংকিপক্স নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাপক হারে ছড়িয়ে না পড়লে এই ভাইরাস নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। ইংল্যান্ডের পাবলিক হেলথ বিভাগের কর্মকর্তা ড. নিক ফিন বলছেন, এটা বুঝতে হবে যে মাংকিপক্সের ভাইরাস খুব সহজে মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারে না।
সে কারণেই এখন পর্যন্ত মাংকিপক্স নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। বিবিসি বাংলা।