চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: ছয় মাস আগে খুন হন চাঁপাইনবাবগঞ্জ যুবলীগ নেতা খাইরুল আলম জেম। তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে এবং সেই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তা উঠে এসেছে পাঁচ আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে মামলার অন্যতম আসামি মেসবাউল হক টুটুল বলেছেন, ‘কৃষক লীগের সম্মেলনের পরে চাঁপাইনবগঞ্জ পৌর মেয়র মুখলেসুর রহমানের সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় জেমকে পঙ্গু করে ফেলার। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৯ এপ্রিল তাকে হাতুড়ি ও চাকু দিয়ে আঘাত করলে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এ ঘটনার পর আমি মেয়রকে ফোন করে জেমকে মারার ঘটনা বলি। মেয়র বলেন ঠিক আছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপাতত দূরে কোথাও চলে যাও।’ এদিকে এই খুনের মামলার এজাহারভুক্ত ১ নম্বর আসামি মেয়র মুখলেসকে ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিনের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার আসামির জামিন মঞ্জুরের আদেশ দেন।
এই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত। ইতিমধ্যে সরকার পক্ষ জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। আশা করছি, সোমবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির কাছে আবেদনটি শুনানির জন্য পেশ করা সম্ভব হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ জুন থেকে কারাগারে আছেন মুখলেস। ২০ সেপ্টেম্বর তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সিনিয়র দায়রা জজ মোহা. আদীব আলী। খারিজ আদেশে বলা হয়, আসামি মুখলেস একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এজাহার বর্ণিত ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী, হুকুমদাতা ও আসামিদের সহায়তাকারী হিসাবে তার নাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছে। তার জামিন বিবেচনা করা হলে মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের প্রভাবিত করার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে মেয়র মুখলেস জামিন পাওয়ায় আতঙ্কে আছেন ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা। নিহত জেমের ভাই মো. মাহবুব উল আলম ফাহিম ইত্তেফাককে বলেন, মেয়র জামিন পেয়েছেন। আসামি প্রভাবশালী। এখন কারাগার থেকে বেরিয়ে মামলার তদন্তকে প্রভাবিত করবেন. সাক্ষীদের হুমকি দেবেন সেই আশঙ্কা করছি। আমরা আদালতের কাছে ন্যায় বিচার চাই।
গত ১৯ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে বাইতুল ইসলাম জামে মসজিদের পাশে ইফতারের পূর্বমুহূর্তে আসামিরা হাতুড়ি দিয়ে প্রথমে মাথায় আঘাত করে এবং পরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছুরি মেরে জেমকে হত্যা করেন। ঘটনার তিন দিন পর মামলা নেয় সদর থানা পুলিশ। ২৬ এপ্রিল হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া টুটুলসহ পাঁচ আসামিকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। ঐ দিনই তারা আদালতে জবানবন্দি দেয়। নিহত জেম যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। ছিলেন শিবগঞ্জ পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তত্কালীন কাউন্সিলর। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া আসামিদের মধ্যে পাঁচ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
‘সবাই সিদ্ধান্ত নেই জেমকে আমরা মারব’:টুটুল ছাড়াও আসামি ইব্রাহীম, মো. শামীম রেজা, মাসুদ রানা ও মিলন হোসেন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এর মধ্যে ইব্রাহীম পৌর কৃষক লীগের ১ নম্বর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি জবানবন্দিতে বলেন, আমি মেয়রের সঙ্গে রাজনীতি করি। কৃষক লীগের সম্মেলন থেকে জেমের ওপর আমাদের টার্গেট হয়। জেমের ছোড়া বোমার আঘাতে আমি আহত হই। বিষয়টি নিয়ে মেয়রের সঙ্গে আলোচনা করি। আমরা বলি, আপনি থাকতে আমরা কেন বারবার মার খাব। আমরা সবাই ক্ষিপ্ত হই এবং সিদ্ধান্ত নেই জেমকে আমরা মারব। ঘটনার দিন টুটুল ভাই, রানা, শামীম ও আমি জেমকে ঘিরে ধরি। প্রথমে টুটুল ভাই জেমকে হাতুড়ি দিয়ে মাথার পেছনে আঘাত করে। তারপর রানা চাচা হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। শামীম টুটুল ভাইয়ের কাছ থেকে হাতুড়ি নিয়ে জেমের পায়ে আঘাত করে। আমি জেমকে চাকু দিয়ে পাঁচ-ছয়টি আঘাত করি। রানা চাচা আমাকে চাকু দিয়েছিল।