পৃথিবীর বহু দেশেই জীববৈচিত্রের নানা ধরন ও ধারণ। এমন বেশ কিছু জায়গা রয়েছে, যেখানে নির্দিষ্ট কিছু প্রজাতির প্রাণী বা উদ্ভিদ দেখতে পাওয়া যায় বা যায় না। কিন্তু এগুলো সাধারণত খুব স্পেসিফিক হয়। সাধারণ গাছপালা প্রাণী-পতঙ্গের ক্ষেত্রে অতটা নজর পড়ে না। কিন্তু শুনলে আশ্চর্য লাগা অস্বাভাবিক নয় যে, সাপের মতো এত বহুল পরিচিত সাধারণ এক সরীসৃপও কোন কোন দেশে পাওয়া যায় না! যেমন আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড।
সাপ নিউজিল্যান্ডের আদি প্রাণী নয়। কখনও-সখনও সমুদ্রপথে সাপ সে দেশের তীরে এসে ভেড়ে। কখনও জাহাজের মারফতও চলে আসে। তবে তাদের দেখা পাওয়া গেলেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তা ছাড়া নিউজিল্যান্ডের শীতার্ত আবহাওয়াও সাপের পক্ষে ততটা অনুকূল নয়, তাই তাদের বসবাস বা প্রজনন এখানে সেভাবে হয় না বলেই মত বিজ্ঞানীদের।
আয়ারল্যান্ডও সর্পহীন। কেন, তার দু’ধরনের কারণ রয়েছে। সেদেশের কিংবদন্তি বলছে, পেগানিজম থেকে ক্রিশ্চিয়ানিটিতে বদলের সময়-পূর্ব আয়ারল্যান্ডের সেন্ট প্যাট্রিক পাঁচের শতকেই আয়ারল্যান্ডকে সর্পহীন করে দিয়েছিলেন। কথিত আছে, সেন্ট প্যাট্রিক পাহাড়ের মাথায় একটা ৪০ দিনের উপবাস পালন করছিলেন। সেই সময়ে সাপেরা নাকি তাঁকে খুব বিরক্ত করত। তিনি রেগে গিয়ে সাপেদের আইরিশ সমুদ্র পর্যন্ত তাড়া করেছিলেন। তারপর থেকে আর আয়ারল্যান্ডের দ্বীপে কখনও সাপ দেখা যায়নি।
কিন্তু বিজ্ঞান তো আর এই গল্পকে বা বিশ্বাসকে মান্যতা দিতে পারে না! তাঁরা বলছেন, এই গ্রহের শেষতম বরফযুগ কেটেছে আজ থেকে মোটামুটি ১৫০০০ বছর আগে। তারপর থেকে কোনও কোনও অঞ্চলে আবহাওয়া মোটামুটি অপরিবর্তনশীলই থেকে গিয়েছিল। এই সময়ে মূল ইউরোপের ভূখণ্ড থেকে আলাদা হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। দুই ভূখণ্ডের মাঝে ১২ মাইল দীর্ঘ জল-অঞ্চলের উৎপত্তি ঘটে। আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডের মাঝে তৈরি হয় নর্থ চ্যানেল। ফলে, সাপেদের পক্ষে ওই প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে ওই প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যে টিকে থাকা বা বেঁচে থাকা ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছিল। ফলে, আয়ারল্যান্ডের মাটিতে ক্রমে কমতে লাগত সাপের সংখ্যা।–জি নিউজ