আব্দুর রহমান রাসেল,রংপুর ব্যুরোঃ তিস্তার পানি কখনও বাড়ছে কখনও কমছে। ফলে তিস্তা উপকুলের মানুষদের চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে এসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ অসহায় জীবন যাপন করছে। এদিকে তিস্তার পানির স্রোতে রংপুরের একটি বাধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিস্তায় পানি কখনও কমছে, কখনও বাড়ছে। ফলে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়েছে গংগাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছার বিভিন্ন এলাকায়। এতে করে অসহায় হয়েছে এসব এলাকার হাজার হাজার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ৯টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৪৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। অন্যদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে তথ্যনুযায়ী রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে পানি সমতলে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার তিস্তা তীরবর্তী এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ভারতের উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে বাংলাদেশের তিস্তা বেষ্টিত উত্তরাঞ্চলেও বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে। সিকিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে কাজ করছে স্থানীয় প্রশাসন।
তিস্তা পাড়ের বানভাসি সাজু মিয়া বলেন, এক কৃষক বলেন, চরের দশ বিঘা জমিতে আগাম আমন ধান চাষ করেছি। সব ধানে পাকা রঙ ধরেছে। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। যদি পরিস্থিতি খারাপ না হয় তাহলে ধান কেটে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারব। তবে ফের পানি বেড়ে ধান তলিয়ে গেলে আর কিছুই পাওয়া যাবে না
স্থানীয়রা জানান, তিস্তার পানি প্রবাহ বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় বন্যা পরিস্থিতিরও কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। কমতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চলের পানি। এতে তারা শঙ্কা মুক্ত হতে শুরু করেছেন। তবে বন্যার পানিতে চরের কোথাও কোথাও শত শত হেক্টর জমির ধান ও শীতকালীন সবজি খেত তলিয়ে গেছে। পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন।
তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কীকরণ বার্তায় আরও কয়েকদিন বৃষ্টিপাতে এবং ভারত থেকে আসা পানিতে যেকোনো সময় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে
এদিকে গত রাতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গংগাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলী এলাকায় স্বেচ্ছাশ্রমে তৈরি বাধটির প্রায় দেড়শ মিটার ভেঙ্গে গিয়ে বিলীন হয়েছে বেশ কিছু ঘরবাড়ি।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড, তত্ত্বাধায়ক প্রকৌশলী, আহসান হাবীব বলেন, হঠাৎ তিস্তায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায়, এসব এলাকার মানুষদের নিরাপদে থাকতে মাইকিং করাসহ সকল পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বন্যায় প্রতিবছর ভাঙ্গনের হাত থেকে বাচতে, গংগাচড়া উপজেলার লক্ষিটারী ইউনিয়নের মানুষজন স্বেচ্ছাশ্রমে ৭ কিলাোমিটার বাধ নির্মান করে ২ বছর আগে। তবে এবার এই বাধটির প্রায় দেড়শ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তার বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ কোন কর্তৃপক্ষ।