টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ডাকাত চক্রের ১০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এ ঘটনায় ১৩ ডাকাত অংশ নেয় বলে জানিয়েছেন র্যাব কর্মকর্তারা।
সোমবার (৮ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব তথ্য জানান।
কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রোববার (৭ আগস্ট) গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী মো. রতন হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, মো. সোহাগ মন্ডল, খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু, মো. বাবু হোসেনওরফে জুলহাস, মো. জীবন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. নাঈম সরকার, রাসেল তালুকদার, মো. আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রতন মিয়া ওই বাস ডাকাতির ৩ দিন আগে তার সহযোগী ডাকাত রাজা মিয়াকে বাস ডাকাতির প্রস্তাব দিলে রাজা মিয়া দলের অন্যান্য ডাকাতদের সংঘটিত করার কথা বলে। পরবর্তীতে রতন, মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে ডাকাতির পরিকল্পনার কথা জানায় এবং ডাকাত মান্নান তার সহযোগী সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে নিয়ে ডাকাতিতে যোগ দেয়। ডাকাতিতে রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন ডাকাত অংশ নেয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রতনের নেতৃত্বে গত ২ আগস্ট, দুপুরে গাজীপুরের জিরানী বাজার এলাকায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। মূল পরিকল্পনাকারী রতন ডাকাতির কাজে প্রস্তুতির আর্থিক খরচ বহন করে। চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রতন ডাকাত ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও ১টি ক্ষুর সংগ্রহ করে।
তিনি জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাতির রাতে ডাকাত রাজাসহ চক্রের অন্যান্য সদস্যরা সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে। রাত আনুমানিক ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌঁছলে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেয় এবং যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন বাসটিতে উঠে। পরবর্তীতে আরও দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠে। বাসটিতে ২৪ জন সাধারণ যাত্রী থাকায় ডাকাত চক্রের অধিকাংশ সদস্য বাসের পেছনের দিকে বসে। বাসটি যখন বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করে তখন রতন ডাকাত দলের সদস্যদের চাকু ও ধারালো কাঁচি দেন। আউয়াল ধূমপানের কথা বলে বাসের গেটের কাছে যায় এবং অন্যান্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে এবং রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদের হাত মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে মুখ ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়। পরবর্তীতে টাঙ্গাইলের হাটুভাঙ্গা মোড় হয়ে মধুপুরে যাওয়ার পথে মধুপুরের রক্তিপড়া এলাকায় রতন গাড়ি চালানোর সময় লুট হয় মালামাল। পরে মালামাল নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে বাক-বিতন্ডার কারণে রতন পেছনের দিকে তাকালে বাসটি রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লেগে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একপাশে হেলে পড়ে। তখন ডাকাতদলের সবাই লুটকৃত মালামালসহ বাস থেকে নেমে পালিয়ে যায়।
র্যাব জানায়, পরবর্তীতে বাসে করে ডাকাত চক্রের সদস্যরা টাঙ্গাইলের মধুপুর এলাকায় যায় এবং অটোরিকশাযোগে মধুপুরের কুড়ালিয়া এলাকায় রতনের নিকটাত্মীয়ের ফাঁকা বাড়িতে গিয়ে লুন্ঠিত মালামাল নিজেদের মধ্যে বন্টন করে। পরে রতন গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে। গ্রেপ্তারকৃত মান্নান, আলাউদ্দিন ও বাবু পৃথকভাবে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত আসলাম, নাঈম, রাসেল প্রথমে নিজের এলাকায় ও পরবর্তীতে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ এলাকায় আত্মগোপন করে। ডাকাত জীবন কোনাবাড়ীতে আত্মগোপন করে। ডাকাত দীপু প্রথমে টাঙ্গাইলের পিরোজপুর গ্রামে ও পরবর্তীতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় আত্মগোপন করে। সোহাগ প্রথমে জিরানী বাজার ও পরবর্তীতে জামালপুর জেলায় এবং পুনরায় জিরানী বাজারে আত্মগোপন করে।
র্যাব জানায়, রতন হোসেন ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী। সে পেশায় গাড়ির হেলপার। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই ডাকাতির অভিযোগ ছিল। রতন ২০১৮ সালে নূরনবী, জীবন ও অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে রোড ব্লক করে সাভার পরিবহনের একটি বাস ডাকাতি করে। বাস ডাকাতির ঘটনায় রতন গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় দেড় বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে ২০২০ সালে। পুনরায় নূরনবী, জীবন ও আউয়ালকে নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি অটোরিকশা ছিনতাই করে। তখন ঘটনাস্থলে উপস্থিত জনতা জীবনকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রতন প্রায় ১ বছর কারাভোগ করে। কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে সে তার সিন্ডিকেট নিয়ে সাভার, গাজীপুর বা সিরাজগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে আরও বেশ কয়েকটি ডাকাতি করে।
পূর্বপশ্চিমবিডি