Friday , 29 March 2024
শিরোনাম

রমজান : নিজেকে বদলে ফেলার মাস

আল্লাহতায়ালার অপার কৃপায় বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ সিয়াম সাধনা আর বিশেষ ইবাদতের মধ্য দিয়ে পবিত্র মাহে রমজানের দিনগুলো অতিবাহিত করছেন।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজা ঢাল স্বরূপ এবং আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার একটি নিরাপদ দুর্গ’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল)।

আমরা অনেকেই আছি যারা এ ঢালকে কাজে লাগাচ্ছি না আর ইবাদতে মগ্ন না হয়ে বৃথা সময় অতিবাহিত করছি। আমাদের উচিত এ দিনগুলোতে বৃথা সময় নষ্ট না করে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে রত হওয়া।

কেননা বিশ্বের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। একদিকে গত দুবছর ধরে চলছে বিশ্বময় করোনা মহামারি। অপরদিকে রাশিয়া-ইউক্রেনে চলছে যুদ্ধ। আল্লাহপাকই ভালো জানেন কখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লেগে যায়।

পৃথিবীর সব চেষ্টা-প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও আল্লাহতায়ালা ইচ্ছা করলে এক মুহূর্তেই পারেন বিশ্বের সব বালা-মুসিবত দূর করতে। কিন্তু এর আগে আমাদের সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে। পবিত্র রমজানে আমাদের রাতগুলোকে ইবাদতের মাধ্যমে জাগ্রত রাখতে হবে, সেজদার স্থানগুলোকে অশ্রুজলে সিক্ত করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত, আমরা কি আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার পরিপূর্ণভাবে আদায় করেছি?

পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন-‘তুমি বল, আকাশসমূহের ও পৃথিবীর আদিদ্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া আমি কি অন্য কোনো সাহায্যকারী গ্রহণ করতে পারি? অথচ তিনি রিজিক দান করেন কিন্তু কারও রিজিক গ্রহণ করেন না’ (সূরা আন আম : আয়াত ১৪)। পবিত্র কুরআনের এ আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, আমাদের সবার প্রকৃত সাহায্যকারী হচ্ছেন মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। তিনিই পারেন আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করতে।

রমজান মাসে আমরা অধিক সময় বাসায় অবস্থান করার সুযোগ পাই আর এ সুবাদে হাতে প্রচুর সময়ও পাই তাই এখন সন্তানদের উত্তম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে।

মহানবি (সা.) পিতা-মাতাদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘কোনো পিতা তার পুত্রকে উত্তম শিষ্টাচার অপেক্ষা অধিক শ্রেয় আর কোনো বস্তু দান করতে পারে না।’ (তিরমিজি)। তাই পিতা-মাতার উচিত হবে পুরো রমজানে সন্তানদের উত্তম শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা। আবার পিতা-মাতার প্রতিও সন্তানের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। পিতা-মাতার প্রতি আমাদের যা করণীয় এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমার প্রভু-প্রতিপালক একমাত্র তারই ইবাদত করার এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার তাগিদপূর্ণ আদেশ দিয়েছেন।

তোমার জীবদ্দশায় তাদের একজন বা উভয়েই বার্ধক্যে উপনীত হলে তুমি তাদের উদ্দেশে বিরক্তিসূচক উহ্-ও বল না এবং তাদের বকাঝকা কর না, বরং তাদের সঙ্গে সদা বিনম্র ও সম্মানসূচক কথা বল। আর তুমি মমতাভরে তাদের উভয়ের ওপর বিনয়ের ডানা মেলে ধর। আর দোয়ার সময় বলবে, হে আমার প্রভু-প্রতিপালক! তুমি তাদের প্রতি সেভাবে দয়া কর যেভাবে শৈশবে তারা আমায় লালনপালন করেছিল।’ (সূরা বনি ইসরাইল : আয়াত ২৩-২৪)

আল্লাহতায়ালা এ পৃথিবীতে ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দিয়ে থাকেন পরীক্ষা করার জন্য। অনেককে আল্লাহতায়ালা প্রচুর ধন-সম্পদ দান করেন ঠিকই কিন্তু সেই ধন-সম্পদের সঠিক ব্যবহার না করার ফলে দেখা যায় সে ধ্বংস হয়ে যায় আবার কাউকে সন্তানসন্ততি দেন ঠিকই কিন্তু তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত না করার ফলে এ সন্তান তার জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানসন্ততি যদি প্রকৃত নৈতিকগুণ সম্পন্ন না হয় তাহলে মাতা-পিতার জন্য তা একটি আজাব বই কিছুই নয়। জীবন-বিধান আল কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি দুনিয়ার সৌন্দর্য। এ সন্তানসন্ততি যদি আদর্শ চরিত্রের না হয় তাহলে তা হয় মা-বাবার জন্য পরীক্ষার কারণ-দুঃখের বোঝা।’ (সূরা কাহাফ : আয়াত ৪৬)।

আর এ জন্যই আল্লাহতায়ালা মুমিনদেরকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, ‘আর জেনে রাখ, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততি পরীক্ষার কারণ।’ (সূরা আনফাল : আয়াত ২৭)। একজন পিতা-মাতা হিসাবে সন্তানের সুশিক্ষায় আমাদের দায়িত্ব অনেক বেশি।

পবিত্র মাহে রমজানের এদিনগুলোকে বৃথা নষ্ট না করে সন্তানদের তরবিয়তের দিকে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে। সন্তানদের নিয়ে বসতে হবে, তাদেরকে সময় দিতে হবে, সন্তানরা কুরআন পড়তে না পারলে তাদের শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে। রমজানের এ দিনগুলোতে আমরা যদি ঘরগুলোতে ধর্মীয় আলোচনা করি আর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদে গিয়ে জামাত আদায় করি তাহলে সন্তানদের মাঝে যেমন নামাজ পড়ার অভ্যাস সৃষ্টি হবে, পাশাপাশি পরিবারে প্রবাহিত হবে শান্তির সুবাতাস।

আল্লাহপাকের কাছে রমজানের ইবাদতের গুরুত্ব অনেক। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একটি রোজা রাখে, তার এ একটি দিনের বিনিময়ে আল্লাহতায়ালা তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)।

পবিত্র মাহে রমজানের এ দিনগুলো কাটাতে হবে আধ্যাত্মিকতা চর্চায়। আমরা আমাদের সন্তানদের নামাজের দোয়াগুলো অর্থসহ শেখাতে পারি এবং কুরআন-হাদিসের বিভিন্ন দোয়া মুখস্থ করাতে পারি। পবিত্র কুরআন থেকে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতে পারি। বিভিন্ন ইসলামি বই পাঠচক্রের আকারে পড়ার আয়োজন করতে পারি। সেহরির আগে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারি।

তাই আসুন না মাহে রমজানের এ দিনগুলোতে পুরো পরিবারকে নিয়ে দোয়া, ইস্তেগফারে রত হই এবং পরিবারে এক আধ্যাত্মিক প্রশান্তিময় পরিবেশ সৃষ্টি করি আর দোয়া করি পবিত্র রমজানের বরকতে যেন তিনি আমাদের ক্ষমা করেন আর পরিবারকে করেন জান্নাতি পরিবার, আমিন। (সংগৃহীত)

Check Also

যত জঙ্গি ধরেছি, তাদের কেউ মাদ্রাসার ছাত্র নন: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

জঙ্গিবিরোধী অভিযানে যত জঙ্গি ধরেছি, তার মধ্যে কেউই মাদ্রাসার ছাত্র নন বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x