রাহাত মামুন
চট্টগ্রাম (রাঙ্গুনিয়া) সংবাদদাতা
চলছে বর্ষাকাল, হচ্ছে ভারী বর্ষণ। আর বৃষ্টি হলেই শঙ্কা বেড়ে যায় রাঙ্গুনিয়ার পাহাড়ের পাদদেশে থাকা বাসিন্দাদের। গত কয়েকদিনে থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে সে শঙ্কা আরও বেড়েছে।
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কিছু ইউনিয়নে ইতিমধ্যে পাহাড়ধ্বসের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে গতকাল (২০ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার প্রবেশপথ জিয়ানগর – আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় কাপ্তাই সড়কে পাহাড়ধসের কারণে দীর্ঘক্ষণ যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মিরা এসে মাটি সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। টানা বৃষ্টির কারণে উপজেলার পাহড়ি অঞ্চলে দেখা দিয়েছে পাহাড়ধ্বস ও বন্যার শঙ্কা। ইতোমধ্যেই বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক। বিচ্ছিন্ন হয়েছে এলাকাভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থা।
গত শনিবার সকাল থেকেই উপজেলাজুড়ে মাইকিংয়ের মাধ্যমে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদস্থানে সরে যেতে সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। তবে যারা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে সরবে না, তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হবে।
এদিকে প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা চেয়ারম্যানদেরও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে নির্দেশনা দিয়েছেন ইউএনও।
উপজেলায় পাহাড়ধ্বসের ঝুঁকিতে বসবাস করছে প্রায় ৬ হাজার মানুষ। ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া না হলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জামশেদুল আলম বলেন, ‘পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করছেন তাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যারা সরবে না, তাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সরিয়ে দেয়া হবে। প্রত্যেক ইউনিয়নে নির্দেশ দেয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে।’
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে প্রায় কয়েক হাজার পরিবার। এসব পরিবার পাহাড়ের চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসতঘর গড়ে তুলেছে।
প্রতিবছর বর্ষায় দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক বসতঘর পাহাড়ের মাটি ধসে চাপা পড়ে যায়। ইতোমধ্যে ঘটেছে অনেক হতাহতের ঘটনাও। মৃত্যু হয়েছে কয়েক ডজনেরও বেশি মানুষের। কিন্তু তারপরও পাহাড়ে থেমে নেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস।
বর্ষা মৌসুম আসায় পাহাড়ে বসবাসকারী এসব পরিবারের মধ্যে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তারপরও থামছে না পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন। প্রতিবছর বর্ষা এলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসলেও সারা বছর পাহাড় কেটে বসতি স্থাপন নিয়ে প্রশাসন অনেকটাই নির্বিকার থাকে। এ বর্ষা মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ায় আবারও পাহাড় ধসে জানমালের ক্ষতির শঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার চন্দ্রঘোনার বনগ্রাম, গুমাই বিল, উত্তর রাঙ্গুনিয়া ডিসি সড়ক, পারুয়া ডিসি সড়ক, বগাবিলী ও পোমরা ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ-ঘাট পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেছে। ছোট-বড় পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশকিছু অভ্যন্তরীণ সড়ক। সবমিলিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার পোমরা ইউনিয়নের এম এ হান্নান আশ্রয়ন প্রকল্প, সত্যপীর মাজার গেইট এলাকা, বেতাগী, পৌরসভার বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চল, চন্দ্রঘোনার বনগ্রাম, সরফভাটা, শিলক, পদুয়া, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, পারুয়া, হোছনাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে সহস্রাধিক পরিবার। ঝুঁকিপূর্ণ হলেও দারিদ্রের কারণে বাধ্য হয়ে সেখানে থাকছেন বলে জানিয়েছেন পাহাড়ে বসবাসরত এসব পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকাজুড়ে রয়েছে পাহাড়ি অঞ্চল। ২০১৭ সালের জুন মাসে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার রাজানগর ও ইসলামপুর ইউনিয়নে পাহাড় ধসে নারী-শিশুসহ ৪ পরিবারের ২২ জন মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল।
এ ঘটনার পরও উপজেলার হাজার হাজার মানুষ এখনও পাহাড়ে বসবাস করছেন। যার প্রায় অর্ধেক মানুষ পাহাড়ের ঢালুতে ভূমিধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। প্রশাসন এবং স্থানীয় প্রতিনিধিদের নানা চেষ্টাতেও পাহাড় থেকে সরিয়ে আনা যাচ্ছে না এসব অবৈধ বসবাসকারীদের। ইতোমধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ে বসবাসকারী এসব বাসিন্দাদের সরে যেতে একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ।
উপজেলার গুচ্ছগ্রাম এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীরা বলেন, দুইদিন ধরে রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। আমার বাড়ির পাশ থেকে কিছু মাটি সরে গেছে। অবস্থা আশংকাজনক মনে হলে এবং বেশি বৃষ্টি হলে আশ্রয় কেন্দ্র চলে যাব।