রাহাত মামুন
রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় লাগাতার বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পরিস্থিতির অবনতি। বন্যায় ঘরের ভেতরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে হাজারো পরিবার। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ছাড়াও উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ভেঙে গেছে বেশ কিছু কাঁচা সড়ক। পাহাড় ধ্বসে আহত হয়েছেন এক গর্ভবতী নারী।
জানা যায়, উপজেলার বেতাগী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হাশেম মাস্টারের বাড়ি এলাকায় ঘরে পাহাড় ধ্বসে পড়ে এক গর্ভবতী নারী গুরুত্বর আহত হয়েছেন। তিনি বর্তমানে স্থানীয় নোয়াপাড়া কসমিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের কাটাখালী এলাকায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় শতাধিক পরিবার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কাটাখালী এলাকায় একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য কাটাখালী খালে বাঁধ দেয়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম বেকায়দায় পড়েছেন এলাকার মানুষ।
এছাড়া উপজেলার পোমরা, বেতাগী, চন্দ্রঘোনা, উত্তর রাঙ্গুনিয়ার বগাবিলি, গুমাইবিলসহ প্রায় অর্ধশতাধিক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের বনগ্রাম, মিশন এলাকা, পৌরসভা ইছাখালী গুচ্ছগ্রাম, পোমরা ইউনিয়নের জিয়ানগরসহ কর্ণফুলী তীরবর্তী এলাকা পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে বেশ কয়েক ঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
পানিবন্দি হওয়া মোহরম আলী বলেন, ‘আমার ঘরে হাঁটুপানি। রাস্তায় কোমর সমান। অনেকেই দিশেহারা হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আমি নিজেও বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা কালা মিয়া জানান, বৃষ্টির দিনে ঠিকাদার কালভার্ট নির্মাণ করছেন। গত ১৫ দিন আগে কাজ শুরু করেছে মাত্র। কাটাখালী খালে বাঁধ দিয়ে কাজ করতে গিয়ে খালের পানি প্রবাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে অল্প বৃষ্টিতেই পুরো এলাকাজুড়ে জলজট সৃষ্টি হয়। রোববার দিনব্যাপী বৃষ্টির পর খালের পানি উপচে এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে।
চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইদ্রিচ আজগর বলেন, ‘তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপির পক্ষ থেকে ত্রান সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে পাহাড় ধ্বস, ও বন্যা কবলিতদের। ঝুঁকিপূর্ণদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হচ্ছে।’
বেতাগী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিউল আলম শফি বলেন, ‘গর্ভবতী ওই মহিলাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণের কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
কালভার্ট নির্মাণের জন্য খালে বাধ দেওয়ায় বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কালভার্টের জন্য দেয়া বাধটির কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। বিষয়টি কিভাবে সমাধান করা যায়, তা দেখা হচ্ছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আতাউল গনি ওসমানী জানান, ‘বন্যাদুর্গত ও পাহাড় ধসের ঘটনায় আশ্রয়হীনরা নিকটস্থ আত্মীয়দের বাড়িতে অবস্থান নিয়েছেন। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে কারও যদি কোনো সহায়তার প্রয়োজন হয় যেন দ্রুত অবহিত করেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রান সহায়তা পাঠানো হবে। পাশাপাশি আমরা মাইকিং চালিয়ে যাচ্ছি যাতে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারীরা নিরাপদ স্থানে সরে আসে।’