রাঙ্গুনিয়া(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি৷
চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের সাহাব্দিনগর মালাকার পাড়ায় পুকুর থেকে উদ্ধার হওয়া তপু মালাকার (২৪) হত্যার দুই বছরের মাথায় রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি নিখোঁজ হয় তপু মালাকার নামে ও যুবক। নিখোঁজের পর থেকে স্বজনরা তাকে খুঁজে না পেয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে তদন্ত করা হলে ৫ জানুয়ারি তপু মালাকারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
লাশ উদ্ধারের পর থানায় অপমৃত্যু দায়ের করে পুলিশ। তবে তপুর পরিবারের দাবী, তপুকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করেছে পুলিশ। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হলেও হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি তারা। পরে মামলার তদন্তভার ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারাও রহস্য উদঘাটন করতে না পেরে সর্বশেষ গত দুইমাস আগে মামলার তদন্তের দায়িত্ব নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় লাশের ক্ষতচিহ্ন দেখে তদন্তে নেমে দীর্ঘ দুই বছরের মাথায় হত্যার রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ৩ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় তারা।
গ্রেফতার ৩ জনের মধ্যে দুইজন ঘটনার সাথে সরাসরি যুক্ত থাকার কথা স্বীকার করলেও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী জনি মালাকার নামের আরেক আসামি ঘটনার পর থেকে বিদেশে পলাতক রয়েছে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলো একই এলাকার বসু কুমার(৩৩), সুবল মালাকার(২৭), বাপ্পা চৌধুরী(৩২)। আসামি বসু মালাকারের দেওয়া জবানবন্দি অনুযায়ী আজ রোববার ( ১১ ডিসেম্বর) তাকে ঘটনাস্থলে এনে আলামত খুঁজতে থাকে পিবিআই। যে পুকুরে তপু মালাকারকে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয় সে পুকুরের পানি সেচ দিয়ে হত্যায় ব্যবহার করা লাটি (বাটাম) উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
আলামত উদ্ধার পরবর্তী চট্টগ্রামের পিবিআই’র পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান জানান, দুই মাস আগে আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্তভার আমাদের দেওয়া হয়। এরপর মামলার সুরতহাল নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন মোবাইল নাম্বার ক্লোন করে রহস্য খুঁজে বের করি। হত্যার সাথে জড়িত আসামিদের সন্ধান পেলে তাদের খুঁজতে বের হলে তারা বিভিন্নভাবে আত্মগোপনে চলে যায়। একপর্যায়ে হত্যার সাথে জড়িত ৩ জনকে রাঙ্গুনিয়া এবং সিলেটের মৌলভীবাজার থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
তিনি আরও বলেন, তাদের গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে গিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে তাদের ৩ জনের মধ্যে দুইজন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তাদের মধ্যে একজনকে নিয়ে আজ আমরা ঘটনাস্থলে আসি। তারা স্বীকার করেছে তপু মালাকারকে নৃশংস ভাবে হত্যা করে তার মৃত দেহ পুকুর পাড়ে গাছের নিচে ফেলে দেওয়ার কথা।
আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তারা একটা কাঠের বাটাম দিয়ে তপু মালাকারের মাথায় আঘাত করে হত্যা করার পর গাছের বাটামটি পুকুরে পেলে দেয়। আর যে বাটামটি দিয়ে মারা হয়ে সেটি হত্যার গুরুত্বপূর্ণ আলামত হওয়ায় তা সংগ্রহ করার জন্য আমরা পিবিআই জেলা টিম চট্টগ্রাম এখানে এসেছি এবং পুকুর সেচ দিয়ে বিকেলের দিকে আসামির দেয়া তথ্য অনুযায়ী আলামতটিও পেতে সক্ষম হয়েছি (কাঠের বাটাম)।
তপুকে কেন হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান আরো বলেন, আসামিদের সাথে মাদক ব্যবসা সংক্রান্ত টাকাপয়সার লেনদেন ছিলো বলে জানা যায়। সেটিকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটনো হয়। তাদের তিনজনের মধ্যে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল জনি মালাকার।