ইডেন মহিলা কলেজসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, সাধারণ ছাত্রীদের হেনস্তা ও অনৈতিক কাজে বাধ্য করানোর প্রতিবাদে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঝটিকা মিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। এ সময় মিছিলের পেছন থেকে পুলিশ ধাওয়া করেছে বলে দাবি করে সংগঠনটি। এ ঘটনায় পুলিশের ২ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
সোমবার (৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের সামনে এই ঘটনা ঘটে বলে গণমাধ্যমে প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দাবি করেছে জামায়াত। পরে ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার মো. কবির তাদের দুই সদস্য আহত হওয়ার খবর জানান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াত দাবি করে, ‘মিছিলে পিছন দিক থেকে পুলিশ অতর্কিত মারমুখী আচরণ করে’। এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আজকের এই কর্মসূচিতে অনাকাঙ্খিত পরিবেশ সৃষ্টি ও আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিত বাহিনীর এই আচরণে জনগণের ক্ষোভ আরও বেড়ে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার ডিউটি অফিসার এসআই মো. কবির বাংলাভিশনকে বলেন, জামায়াত মিছিল বের করলে তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে চাইলে পুলিশের উপর হামলা করে তারা। পরে পুলিশ তাদের প্রতিহত করে। এতে দুজন পুলিশ আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াত আরও জানায়, দলের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে এই মিছিলে দলের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন ও শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মু. আব্দুস সালাম, আব্দুর রহমান, মোবারক হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল কাইউম মুরাদ, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সভাপতি আরিফুর রহমানসহ ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ জামায়াতের বিভিন্ন থানা আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মাসুদ বলেন, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ঐতিহ্যবাহী নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজ। ছাত্রলীগের একের পর এক অনৈতিক ও বিতর্কিত ঘটনায় আজ এ প্রতিষ্ঠানের অতীতের সকল অর্জন ও সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। অবিলম্বে ইডেন মহিলা কলেজসহ সারাদেশে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, অনৈতিকতা ও অসভ্যতা বন্ধ করুন। সম্প্রতি দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগ ইডেন কলেজে সাধারণ ছাত্রীদের অনৈতিক কাজে বাধ্য করছে। যা তাদেরই নেতৃবৃন্দ গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অকপটে স্বীকার করেছেন। আমরা আজকের এই সমাবেশ থেকে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ছাত্রলীগের হাতে কেউ নিরাপদ নয় দাবি করে তিনি বলেন, সারাদেশে ছাত্রলীগের কার্যকলাপে এটা প্রতীয়মান যে, ছাত্রলীগের হাতে ৫ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের বৃদ্ধা পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের এসব নোংরামী ও বেহায়াপনা বন্ধ করতে হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার স্বার্থে তদন্তের মাধ্যমে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট ও দেশ-জাতি ধ্বংসের মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়িত থাকার জন্য ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের বিচার ও তাদেরকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
ড. মাসুদ বলেন, আমরা মনে করেছিলাম স্বাধীন বাংলাদেশে আমাদের ভাই ও বোনেরা তাদের ইজ্জত ও আব্রুর নিরাপত্তা পাবে, তাদের কথা বলার স্বাধীনতা থাকবে, তারা অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে অথচ আমরা দুর্ভাগ্যজনক ভাবে লক্ষ্য করছি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মুক্তিযুদ্ধের ধোঁয়া তুলে বরং আমাদের স্বাধীনতাকে বারবার প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে এই নৈরাজ্য কোনোভাবেই চলতে দেওয়া যায় না। ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে তাদের অপকর্মের জবাব দিতে হবে। ছাত্রলীগের নৈরাজ্য বন্ধ করতে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার গণ-আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না বলে দাবি করে দলটির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আজকে বাংলাদেশে আলেমদেরকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে বন্দী করে রাখা হয়েছে। আজকে সারাদেশে জামায়াতের অফিসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। জামায়াতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে লাভ হবে না। সারাদেশে মানুষের ঘরগুলোকে অফিসে পরিণত করে জনগণকে সাথে নিয়ে রাজপথে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনের মাধ্যমে এই দেশকে মুক্ত করা হবে।