র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই দেশের সার্বিক আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে সব ধরণের অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাব নিয়মিত জঙ্গী, সন্ত্রাসী, সংঘবদ্ধ অপরাধী, অস্ত্রধারী অপরাধী, মাদক, ছিনতাইকারীসহ ডাকাতির বিরুদ্ধে ব্যপক অভিযান চালিয়ে আসছে। এছাড়া প্রতারণা ও জালিয়াতি দমন র্যাবের একটি গুরূত্বপূর্ণ ও চলমান অভিযান। র্যাবের এই অভিযান দেশের সকল মহলে প্রশংসিত হয়েছে ।
গত ১০/১০/২০২২খ্রিঃ র্যাব-১০ এর একটি অভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, ভুয়া ডিবি পরিচয় প্রদানকারীর একটি চক্র রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার বিভিন্ন ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও পথচারীদের ডিবি পরিচয় প্রদান করে তাদেরকে মিথ্যা মামলা ও বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে টাকা ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে রাজধানীর ধলপুর এলাকায় অবস্থান করছে।
এরই ধারাবাহিকতায় উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল ১০ অক্টোবর ২০২২ খ্রিঃ তারিখ রাতে র্যাব-১০ এর উক্ত আভিযানিক দল রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন ধলপুর কমিউনিটি সেন্টারের এলাকায় একটি অভিযান পরিচালনা করে ভুয়া ডিবি পরিচয় প্রদানকারী চক্রের ১। মোঃ সবুজ খাঁন (৪৬), পিতা- মৃত আ: বারেক খাঁন, স্থায়ী সাং- চড়াদী, থানা- বাকেরগঞ্জ, জেলা- বরিশাল, ২। মোঃ মিন্টু পাটোয়ারী (৪০), পিতা- মৃত মিন্নাত পাটোয়ারী, মাতা- মৃত ফুল বানু, স্থায়ী সাং- দুর্গাদী, থানা- চাঁদপুর সদর, জেলা- চাঁদপুর, ৩। মোঃ রাসেল মোল্লা (৪৫), পিতা- মৃত আ: রব, মাতা- মৃত জুলেখা বেগম, সাং- নদীয়ার চাঁন, থানা- বোয়ালমারী, জেলা-ফরিদপুর, ৪। মোঃ ইকবাল মিয়া (৩৯), পিতা- মোঃ মালেক মিয়া, মাতা- মৃত খোদেজা বেগম, স্থায়ী সাং- শিরুআইল, থানা- শিবচর, জেলা- মাদারীপুর, ৫। মোঃ মনিরুল ইসলাম (৪০), পিতা- মৃত আ: মান্নান ফকির, মাতা- নুরজাহান বেগম, স্থায়ী সাং- গোপালপুর, থানা- নলছিটি, জেলা-ঝালকাঠি ও ৬। মোঃ খোকন মিয়া (৪৫), পিতা- মৃত হরমছ মিয়া, স্থায়ী সাং- পেরিআটা, থানা- সরিষাবাড়ি, জেলা- জামালপুর’দেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। এসময় তাদের নিকট থেকে ০৩ টি ভুয়া ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ০২ টি ওয়াকিটকি সেট, ০১ টি হাতকড়া, ০১ টি খেলনা পিস্তল, ০১টি হ্যান্ড ফ্লাশ লাইট, ০১টি পুলিশ মনোগ্রাম সম্বলিত স্টিকার, ০৭ টি মোবাইল ফোন ও নগদ-১০৯৫০/- টাকা জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। তারা নিজেদেরকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, গুলিস্থান, মতিঝিল, বাইতুল মোকারমসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাংক হতে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রয়োজনে টাকা নিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিদের টাকা ও অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ ডাকাতি করে আসছিল। তারা তাদের পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেগ ডিবি পুলিশ সেজে গতকাল ১০/১০/২০২২খ্রিঃ তারিখ যাত্রাবাড়ী এলাকার ব্যাংক হতে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টাকা ডাকাতি করতে এসে র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, গ্রেফতারকৃত সবুজ উক্ত ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। তারা মূলত ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনকারী ও টাকা বহনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করত। এই কাজের জন্য গ্রেফতারকৃত রাসেল ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ভিকটিম নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরন করত এবং ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। মিন্টু পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ও তার অন্যান্য সহযোগীরা ডিবি পুলিশের জ্যাকেট সদৃশ্য পোষাক পড়া অবস্থায়, হাতে ওয়াকিটকি সেট ও হ্যান্ডকাপ নিয়ে ভাড়াকৃত মাইক্রোবাসযোগে ভিকটিমের নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশের বিভিন্ন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিত। ভিকটিম কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে মাদক কারবারি বা মামলার আসামীসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের সাথে থাকা মাইক্রোবাসে উঠিয়ে মারধর করত এবং দ্রæত উক্ত স্থান ত্যাগ করে অন্য স্থানে চলে যেত। পরবর্তীতে ভিকটিমের কাছে থাকা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান সকল জিনিসপত্র নিয়ে ভিকটিম’কে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যেত।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সবুজ খাঁন (৪৬) উক্ত ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রের মূলহোতা। সে ডাকাতি কার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি (ডিবি পুলিশের জ্যাকেট, ওয়াকিটকি, হাতকড়া, খেলনা পিস্তল ইত্যাদি) সরবারহকারী হিসেবে কাজ করত। উক্ত ডাকাত দল তার সরবারহকৃত সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করত। র্যাব তার সরবারহকৃত সরঞ্জামাদিসহ উক্ত ভুয়া ডিবি পুলিশ চক্রকে গ্রেফতার করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় একই অপরাধে ০৩ টি মামলা রয়েছে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মিন্টু পাটোয়ারী (৪০) পেশায় একজন ছদ্মবেশী সিএনজি ও অটো-রিক্সা চালক। এই পেশার আড়ালে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডাকাতির জন্য তথ্য সংগ্রহ করত। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী সুবিধাজনক সময় উক্ত বাড়ী/ দোকান/ ব্যাংক/ ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের পথরোধ করে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত।
গ্রেফতারকৃত মোঃ রাসেল মোল্লা (৪৫) পেশায় একজন গাড়ী চালক। সে তার এই পেশার আড়ালে উক্ত ডাকাত দলের গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করত। সে ডাকাত সরদার সবুজের আদেশ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যাংক ও জনবহুল এলাকায় অবস্থান করে ব্যাংক হতে মোটা অংকের টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদেরকে নির্দিষ্ট করে ভিকটিমকে অনুসরন করে ভিকটিমের বর্ণনা ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের সমন্বয়ক মিন্টুকে জানায়। মিন্টু রাসেলের দেয়া তথ্য মতে ভিকটিমের নিকট উপস্থিত হয়ে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিত। আসামী রাসেলের বিরুদ্ধে ফরিদপুরের বোয়ালমারী ও গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ ইকবাল মিয়া (৩৯) ডাকাতির জন্য সবুজ এর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করত। সে প্রায় ০৩ বছর যাবৎ নিজ বাড়ী মাদারীপুর জেলা শিবচর হতে ঢাকায় এসে উক্ত দলের সাথে যুক্ত হয়ে ডিবি পুলিশ সেজে ডাকাতি করে আবার শিবচর চলে যেত। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানায় ০১টি দস্যুতার মামলা রয়েছে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ মনিরুল ইসলাম (৪০) পেশায় একজন দর্জি। গত ০১ বছর যাবৎ সে তার দর্জি পেশা ছেড়ে ডাকাত দলের সাথে যুক্ত হয়ে মিন্টুর অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বগুড়া শেরপুর থানা নাঃ ও শিঃ নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণ মামলা রয়েছে বলে জানায়।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।