রাজশাহী :- মুসলমানদের জন্য বোরবার থেকে শুরু হয়েছে পবিত্র রোমজান মাস। একমাস ধরে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দিনে সিয়াম সাধনা ও দিন-রাত নানা ধরনের ইবাদত বন্দিগী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। মানুষ সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় সাধ্যমত বিভিন্ন ধরনের ফল ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে ইফতার করতে ভালবাসেন।
বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে রোজা উপলক্ষে নিত্যপন্যের দাম কমলেও বাংলাদেশে এ চিত্র সম্পূর্ন উল্টো। এখানে রোজায় সব ধরনের পন্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পায়। যার ধারাবাহিকতা এবারো বইছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজশাহীর কাঁচাবাজারগুলোতে বেড়েছে শাক-সবজির দাম। নিত্য প্রয়োজনীয় শাক-সবজির দাম রমজান উপলক্ষে কয়েকগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে কাঁচাবাজার, ফল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ক্রেতারা। বিশেষ করে এক দিনের ব্যবধানে ৪০ টাকার বেগুন বিক্রি হয় ৮০ টাকায়।
রমজানের ১ম ও২য় দিন(রোববার ও সোমবার )নগরীর সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, সাগরপাড়া কাঁচাবাজার, শিরোইল কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি করলা ৮০-১০০ টাকা, পটল ৭০-৮০, কাঁকরোল ৬০-৭০, কাঁচা মরিচ ৮০-১০০, ঢেঁড়শ ৫০-৬০, আদা প্রতিকেজি ৮৫ টাকা, বেগুন ৭০-৮০ টাকা, মুলা ৩০-৫০ টাকা, বরবটি ৬০-৮০, শসা ৬০-৮০, লাউ প্রতি পিস ৩০-৪০ ও কচুরলতি ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
প্রতি আঁটি লালশাক ১৫ টাকা (৩০০গ্রাম), কলমির শাক ১৫ (৪০০গ্রাম) , প্রতি কেজি পুঁইশাক ২৫-৩০, মিশালি শাক ৪০-৫০(৫০০গ্রাম) ও প্রতিকেজি লাউয়ের শাক ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রতিটি সবজির দাম নুন্যতম ২০-৫০ টাকা কম ছিল প্রতি কেজিতে।
তবে অন্য পন্যের দামের তুলনায় পেঁয়াজের ঝাঁজ একেবারেই নেই। প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ দরে। দাম কমের সারিতে রয়েছে শিম ২৫-৩০, পাকা টমেটো ১৫-২০, গাজর ২০-৪০ ও বাঁধাকপি প্রতিটি ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রোববার সাহেব বাজার, কোর্ট ও শালবাগান বাজার ঘুরে দেখা যায় প্রতিটি ফলের মূল্য ১০-৫০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন তরমুজের দাম গত শনিবার ছিলো ৩৫-৪০টাকা কেজি। রোজার প্রথম দিনে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫-৫০টাকা কেজিতে।
আপেল ১৮০টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০টাকা, নাসপাতি ২১০ থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৪০টাকায়, খেজুর গত বছরের তুলনায় এবার কেজি প্রতি বেড়েছে ৪০-৫০টাকা। রোববার সাহেব বাজারে ১২০-৭৫০ কেজি দরে খেজুর বিক্রি করতে দেখা যায়।
শুধু তাই নয় কমলা ২০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪০টাকায়, মালটা বিক্রি হচ্ছে ২০০টাকা কেজি দ্বরে। বেদানা ৩০০ থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০টাকা কেজি। পাকা কলার প্রতি হালির দাম ৪০ টাকা। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সাহেব বাজারের ফল ব্যবসায়ী রাব্বি। তারা তিনভাই মিলে একটি ফলের দোকান পরিচালনা করছেন। তরমুজ বিক্রেতারা বলেন, হঠাৎ করে শনিবার তরমুজে নতুন চালানে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের বর্ধিত মূল্যে তরমুজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে ফল ক্রেতা রুবেল, উম্মে কুলসুম, পলাশ, তোফাজ্জল, আবুল কাশেম, নাদিরা ও কেয়াসহ আরো অনেকে বলেন, একদিকে রোজায় সকল পন্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধিতে জনগণের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে পড়েছে। সাধারণভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। এরমধ্যে শুরু হয়েছে রোজা।
সারাদিন রোজা রাখার পরেতো আর ডাল ভাত খেয়ে ইফতার করা যায় না। সেজন্য পরিবারের সদস্যদের জন্য একটু ফল নিতে এসে হতবাক হচ্ছি। প্রতিটি ফলের মূল্য ২০-৫০টাকা কেজিতে বেড়ে গেছে। সকালে লক্ষ্মীপুরে এককেজি মাল্টার দাম ছিল ১৫০, দুপুরে এসে দেখি সেই মাল্টার দাম দোকানে থাকতেই দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। এ অবস্থা হলে রোজা রেখে ইফতার করা শুধু পানি ছাড়া আর কোন উপায় নাই। মূল বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।