Friday , 29 March 2024
শিরোনাম

রাজশাহীতে ভুঁইফোড় হাসপাতাল-ক্লিনিকের ছড়াছড়ি

আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী):- রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (রামেক) ঘিরে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা নামের ভুঁইফোড় বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সরকারি সব শর্ত উপেক্ষা করে গড়ে উঠা এসব হাসপাতাল ক্লিনিকে কখনো ভুল চিকিৎসা আবার কখনো অপচিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন রোগি।

রাজশাহীতে ঠিক কতটা অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার হিসেব নেই খোদ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে। তবে দেশের সকল অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতাল ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করতে নির্দেশনার পর নড়েচড়ে উঠেছে রাজশাহীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে রাজশাহীতে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতালের তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু করেছে রাজশাহী সিভিল সার্জন দপ্তর।

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, রাজশাহী জেলায় অনিবন্ধিত কতটি ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে তার সঠিক হিসেব তাদের কাছে নেই। তবে তারা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্দেশনার পরপরই রাজশাহী নগর ও উপজেলায় এই সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ শুরু করেছেন। তবে তাঁর দাবি, ‘নিবন্ধন না নিয়ে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালাচ্ছে এমন সংখ্যা রাজশাহীতে তেমন নেই’।

সিভিল সার্জন আরো জানান, অনেক বেসরকারি হাসপাতাল ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নিবন্ধন নবায়ন করেন নি। অনেকে আবেদন করেছেন। যারা নিবন্ধন নবায়ন করেন নি এবং আবেদনও করেন নি তাদের তালিকা প্রস্তুত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজশাহীতে নিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকাও তার কাছে নেই। তিনি জানান পরবর্তীতে এ বিষয়ে জানানো হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের সব অনিবন্ধিত হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ সময়ের মধ্যে ক্লিনিক বন্ধ করা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। প্রয়োজনে অভিযান পরিচালনা করার কথাও বলা হয়েছে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে গত কয়েক বছরে ব্যাংঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে রামেক হাসপাতালে চিকিৎসার উদ্যেশে এসে দালালদের খপ্পরে পড়ে ওইসব ক্লিনিকে ভর্তি হয়েই রোগীরা হরহামেশায় পড়েন বিপাকে। এসব হাসপাতালে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার ছাড়াও নানা ধরনের অপারেশন করা হয়। ফলে রোগী মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। মাঝে মাঝেই এসব হাসপাতালে মৃত্যু হচ্ছে নবজাতক কিংবা প্রসূতি মায়ের।
তারপরও এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না সিভিল সার্জনের কার্যালয়। অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের কার্যালয়কেই মাসে মাসে ঘুষ দিয়ে চলে নামসর্বস্ব এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক। তাই চোখের সামনে অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কেউ কখনও এগুলো পরিদর্শনেও যান না।

সাম্প্রতিক রাজশাহীতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ঠিক কতজন নবজাতক বা প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে তার হিসাব রাখেনি কেউ। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং থানায় খোঁজ নিয়েও এ তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশ বলছে, মাঝে মাঝেই প্রসূতি বা নবজাতকের মৃত্যু নিয়ে নগরীর লক্ষ্মীপুরের হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোতে হট্টগোল হয়। কখনও কখনও ভাংচুরও করেন রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা। এক সময় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সমঝোতা হয়ে যায়।

রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ‘রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মাঝে মাঝেই বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভাঙচুর করে। পুলিশ গিয়ে তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে। কিন্তু এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তাঁরা নেন না।’ পুলিশের ভাষ্য, তাদের দায়িত্ব তারাই নগরীর ‘লক্ষ্মীপুরে কতটা বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকর সেন্টার আছে তার হিসাব তাঁরা দিতে পারবেন না।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীতে অনুমোদন পাওয়া বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১৬৯টি। এর মধ্যে হাসপাতাল ৫৩টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ১১৬টি। লাইসেন্স না থাকলেও আরও অন্তত শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক চলছে। এগুলোর বেশিরভাগই রাজশাহী শহরের লক্ষ্মীপুর এলাকায়। সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের একেবারেই নাকের ডগায় এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
এর ফলে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর দালালেরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে রোগীরা প্রতারিত হন। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুও হয়। মাঝে মাঝে পুলিশ এবং র‌্যাব রামেক হাসপাতাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে দালালদের গ্রেফতার করলেও লাভ হয় না। কয়েকদিন পর তাঁরা ছাড়া পেয়ে আবারও একই কাজে জড়িয়ে যান।

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক জানান, ইতিমধ্যে রাজশাহীতে অনিবন্ধিত ক্লিনিক-হাসপাতালের তালিকা প্রস্তুতের কার্যক্রম শুরু করেছে। নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Check Also

রিয়াদে প্রবাসী চাঁদপুর জেলা বিএনপির বিশাল ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ফারুক আহমেদ চাঁন,মধ্যপ্রাচ্য ইনচার্জ!! রিয়াদে বাথা সামসিয়া মার্কেটে ইনভেস্টার লায়ন ইসমাইল হোসেন অডিটোরিয়াম এ প্রবাসী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x