আবুল কালাম আজাদ (রাজশাহী) :- সনদ বাণিজ্য করে এক দশকেই কোটিপতি বনে গেছেন রাজশাহীর একজন স্কুল শিক্ষক। এ জন্য তিনি গড়েছেন তিনটি টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট।
তিনি রাজশাহী নগরের ভেতরেই কিনেছেন পাঁচ-পাঁচটি বাড়ি। এছাড়া গ্রামে ধানি জমি, পেয়ারা- আম বাগানসহ নামে-বেনামে বিপুল অবৈধ সম্পদ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে।
রোববার দুদকের সমন্বিত রাজশাহী জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী দুদকের এ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমীর হোসাইন। তার বিরুদ্ধে নিজের টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটে সনদ বাণিজ্য করে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনেছে দুদক।
আসামি আবুল হাসনাত মো. কামরুজ্জামান মুকুল (৪৬) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জোতকার্তিক বিএন উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী শিক্ষক। কামরুজ্জামান মুকুল রাজশাহী নগরীর দড়িখড়বোনা মহল্লার বাসিন্দা। চারঘাটের জোতকার্তিক তার গ্রামের বাড়ি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নিউমার্কেট এলাকার সিটি পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকুল। সিটি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষও তিনি।
এছাড়া নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকায় আদর্শ মহিলা টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে তার আরেকটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবে এটির অধ্যক্ষ তার স্ত্রী মারুফা খানম।
অভিযোগ রয়েছে, এ তিনটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মুকুল সনদ বাণিজ্য করছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মুকুলের স্ত্রী মারুফা খানমের বিরুদ্ধেও মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্র এক দশক আগে নন্দনগাছি থেকে রাজশাহী শহরে আসা-যাওয়া শুরু করেন মুকুল। তারপর গড়ে তোলেন একে একে তিনটি বেসরকারি কারিগরি প্রতিষ্ঠান। এতেই যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে বসেন।
নগরীর গৌরহাঙ্গা পুকুরের পশ্চিম পাশে মুকুলের পাশাপাশি তিনটি বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম বাড়িটি পাঁচতলা। তিন কাঠার ওপর নির্মিত দ্বিতীয় বাড়িটি তিনি কিনেছেন। সোয়া দুই কাঠার ওপর নির্মিত দোতলা তৃতীয় বাড়িটিও তার কেনা। তবে এগুলো মুকুলের স্ত্রী মারুফা খানমের নামে কেনা হয়েছে।
শহরের পদ্মা আবাসিকের হজের মোড় এলাকায় তার তিনতলা আরেকটি বিলাশবহুল বাড়ি আছে। একই এলাকায় পাঁচ কাঠা জায়গা কিনে দোতলা পঞ্চম বাড়িটি করেছেন মুকুল।
এসব বাড়ি ফ্ল্যাট কিংবা ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া দেওয়া আছে। মুকুল এলিয়ন মডেলের দামি গাড়িতে চড়েন। চারঘাটের নন্দনগাছিতে তার ১০০ বিঘার পেয়ারা বাগান এবং ৫০ বিঘার আবাদি জমি ও পুকুর রয়েছে বলে জানা গেছে। মাত্র এক দশকের মধ্যে মুকুল প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
সম্প্রতি তিনি চারঘাটে হত্যা মামলার আসামি হয়েছেন। এরপর গা-ঢাকা দিয়েছেন। কথা বলার জন্য ফোন করা হলে তার নাম্বারটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, মুকুলের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগরীতে সনদ বাণিজ্য করে এক দশকে শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার অভিযোগ পায় দুদক। অনুসন্ধান শেষে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপ-সহকারী পরিচালক সুদীপ কুমার চৌধুরী কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এর আগে দুদকের নোটিশ পেয়ে মুকুল তার সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।
মুকুলের ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেন। জ্ঞাত-আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন।
সম্পদ বিবরণীতে মুকুল উল্লেখ করেছেন, তার নামে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের স্থাবর ও ১৬ লাখ ৩৩ হাজার ৫০ টাকার অস্থাবর মিলে মোট ৬২ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫০ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে।
কিন্তু তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণী পর্যালোচনায় দুদক জানতে পারে, মোট ২ কোটি ১৪ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৯ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ফলে তিনি ১ কোটি ৫১ লাখ ৬৩ হাজার ৯৯৯ টাকা মূল্যের সম্পদের তথ্য গোপন করে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিয়েছেন।
দুদক জানিয়েছে, মুকুলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ৭৫ লাখ ৫৫০ টাকা। অন্যদিকে তিনি অবৈধভাবে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৪ টাকা মূল্যের সম্পদের মালিকানা অর্জন করেছেন।
এটি দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০ এর ২৭ (১) ধারার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই অপরাধে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মামলার প্রক্রিয়াধীন বলে দুদক সূত্র জানিয়েছে।