Friday , 29 March 2024
শিরোনাম

রাজশাহীর আমের রাজ্যে আগুন লাগলেও খুশি চাষি-মালিকরা

রাজশাহী প্রতিনিধি:-
রাজশাহীতে আমের রাজ্য বলা হয় এদতাঞ্চলের সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারকে। মধুমাস জৈষ্ঠ্যের শেষ,আষাঢ়ের শেষবেলায় সূর্য্যরে প্রখর তাপ আর ভ্যাপসা গরম। সেই সাথে আমের দাম অনেক চড়া হওয়ায় যেন আমের রাজ্যে লেগেছে আগুন। শুধু বানেশ্বর বাজারেই নয়; জেলার ছোট-বড় শত শত আমের হাটে চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে আম। এতে আমচাষি ও বাগান মালিকরা বেজায় খুশি।

সরেজমিনে সোমবার ১৮ জুন রাজশাহীর বানেশ্বর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে- গত ২- ৩ বছরের তুলনায় এবার আমের দাম প্রায় তিনগুণ বেশি। এরপরও বাগানের গাছ থেকে আম ভাঙার পরপরই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে ঝুড়ি ঝুড়ি আম। তাই কম ফলনেও হাসি ফুটেছে রাজশাহীর আমচাষিদের মুখে। করোনা দু’বছরের লোকসানের পর ভালো দাম পাওয়ায় চাষি ও বাগান মালিকরা খুবই খুশি। তবে এ বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতারা পড়েছেন চরম অস্বস্তিতে। নিজের, পরিবারের, স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীদের জন্য বিভিন্ন প্রান্তে আম পাঠাচ্ছেন বাড়তি দামেই। জ্যৈষ্ঠের শেষে হাট-বাজার থেকে বিদায় নিতে শুরু করেছে জাত আম গোপালভোগ ও মোহনভোগ। তাদের স্থলাভিষিক্ত এখন ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর), ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ, আম্রপালিসহ নানা জাত ও বাহারি নাম আর স্বাদের আম। বিরামহীন বেচাকেনা চলছে প্রাচীন এ জনপদে। রাজশাহীজুড়ে এখন কেবল আমেরই রাজত্ব। ধারণা করা হচ্ছে, ফলন কম হওয়ায় এবার সময়ের আগেই ফুরিয়ে যাবে রাজশাহীর আম। যার ফলে মাঝ মৌসুমেই চাঙ্গা হয়ে উঠেছে আমের ব্যবসা।

কেবল শহরের বাজারে নয়, আমকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য পাল্টে দিয়েছে এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের অর্থনীতিও। রাজশাহী অঞ্চলের দুটি বড় আমের মোকাম- রাজশাহীর বানেশ্বর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাট। প্রতিদিন এখানে বেচাকেনা হচ্ছে প্রায় ৩-৪ কোটি টাকার আম। আমের কারবার নিয়ে এ অঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের মৌসুমি কর্মসংস্থানও হয়েছে। বাগানের গাছ থেকে আম নামানোর কামলা থেকে আম চালানের ঝুড়ি বানানো এবং বাজারগুলোয় নানা সহায়ক কাজে নিয়োজিত লোকজনের কর্মসংস্থানে উত্তরের এ ছোট্ট জনপদ বছর ঘুরে আবারও কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম পুঠিয়ার বানেশ্বরে গিয়ে দেখা যায়, গোপালভোগ আম প্রায় নেই। ক্ষিরসাপাত বা হিমসাগরই বেশি। আর চলতি সপ্তাহে উঠেছে ল্যাংড়া জাতের আম। রয়েছে লক্ষ্মণভোগও। চাষিরা গাছ থেকে আম নামিয়ে ঝুড়ি বা প্লাস্টিকের ক্যারেটে করে এ আম হাটে আনছেন। দর-দামের পর ঝুড়িসহ তা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ীরা। রোদ-বৃষ্টি ছাপিয়েই দিন-রাত সমানতালে চলছে আমের কারবার। এবার ফলন কম হলেও দাম বেশি পাওয়ায় আমচাষি ও ব্যবসায়ীরা বেশ খুশি।

শনিবার বানেশ্বর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আমের বেচাকেনায় এখন পুরোদমে জমজমাট হয়ে উঠেছে এ হাট। সকাল থেকেই এখানে আসছে নানা জাতের আম। হাটের চারপাশে যেন তৈরি হয়েছে আমের মোহনা। ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব আমের মিষ্টি ঘ্রাণ খুব সহজেই বিমোহিত করছে সাধারণ ক্রেতাদের। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে দিনভর সরগরম থাকছে রাজশাহী জেলার সর্ববৃহৎ এ আমের হাটের পথ-প্রান্তর।

এদিকে জেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী গত ১৫ জুন থেকে আমার পাড়া ও বাজারজাত ও বিক্রি শুরু হয়েছে।এখন আমের রাজা ফজলি সবেমাত্র পাড়া শুরু হলেও গোপালভোগ ক্ষিরসাপাত লেহেঙ্গা হাড়িভাঙ্গা রানী প্শনের বাজার দখলে। সর্ববৃহৎ এ হাটে এখন ক্ষিরসাপাত ও গোপালভোগ আম পাইকারি প্রতিমণ ৩থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। লাংড়া
২৫০০ থেকে ২৭০০ টাকা প্রতিমণ ধরে বিক্রি হচ্ছে।

পুঠিয়ার বানেশ্বর হাটের ইজারদার ওসমান আলী বলেন, ফলন কম হওয়ায় এ বছর আমের দাম তুলনামূলক বেশি। তবে বেশি দামে ক্রেতারা অসন্তুষ্ট হলেও ব্যবসায়ীরা খুশি। এটি রাজশাহীর জেলার মধ্যে সর্ববৃহৎ আমের মোকাম। পুঠিয়া ছাড়াও জেলার দুর্গাপুর, বাগমারা, বাঘা, চারঘাটের বাগান মালিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা এখানে আম বিক্রি করতে আসেন।

আর সীমানার কাছাকাছি এবং বেচাকেনা বেশি হওয়ায় পাশের জেলার নাটোরের বিভিন্ন উপজেলা থেকেও মানুষজন এ হাটে রোজ আম বিক্রি করতে আসেন। এছাড়া রাজশাহীর আম পাইকারি দরে কেনার জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম, খুলনা সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরাও আসেন। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। বাজার কমিটিও আম পরিবহন ও কেনাবেচা থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে চাষি ও ব্যবসায়ীদের।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোজদার হোসেন বলেন, ‘গেল বছর ১৮ হাজার হেক্টর বাগান থেকে ২ লাখ ১৭ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এবার রাজশাহীতে ১৮ হাজার হেক্টর জমির বাগান থেকে ২ লাখ ১৬ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

Check Also

রিয়াদে প্রবাসী চাঁদপুর জেলা বিএনপির বিশাল ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত

ফারুক আহমেদ চাঁন,মধ্যপ্রাচ্য ইনচার্জ!! রিয়াদে বাথা সামসিয়া মার্কেটে ইনভেস্টার লায়ন ইসমাইল হোসেন অডিটোরিয়াম এ প্রবাসী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x