রাজশাহীর হেরিটেজ ভবন বা স্মৃতিগুলি সবই প্রায় ধ্বংশ করা হয়েছে। এমনকি ১৯৪৭ এর পর প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রতিষ্ঠাতাদের ছবি অপসারণের সিদ্ধান্তও বহাল আছে। বহু প্রতিষ্ঠানে নামও মুছে ফেলে উন্নয়নের নামে দখল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক ভুবন মোহন পার্কের মঞ্চ, লোহার দৃষ্টিনন্দন গ্রিল ও সিংহ গেট আগেই ধ্বংস হয়েছে। সবুজ ঘাসের বদলে কংক্রিট।প্রতিষ্ঠাতার নামও মুছে গেছে। অনেক আগেই ব্যতিক্রমী মিনার সমৃদ্ধ বড় মসজিদ ঐতিহ্যবাহী স্মৃতি হারিয়েছে। হযরত শাহ মখদুম (রঃ) এর রওজা মোবারক এর গেট ও মাযারও ভিন্ন স্থাপনা নকল করে পরিবর্তন হচ্ছে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভবনও বিলুপ্ত। দৃষ্টিনন্দন ক্রিশ্চিয়ান গোরস্থানের সকল মারবেল এপিটাফ চুরি হওয়ায় ৩০০ বছরের ইতিহাস হারিয়ে গেছে। Moharani Hemantakumari Water Works লেখা ছোট্ট দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাটি না ভাঙতে তৎকালীন রাসিক প্রধান প্রকৌশলী সরিৎ দত্ত গুপ্তকে অনুরোধ করি। তিনি অবাক হয়ে বলেছিলেন কেন আমরা তার চেয়ে বড় বিল্ডিং বানাবো। সেই ধারাবাহিকতায় সোনাদিঘি এখন সুইমিং পুল। ১৭০ বছর ধরে কীর্তিমান মানুষের পদচারণায় ধন্য ঘোড়ামারা পাবলিক লাইব্রেরি গায়েব। ঐতিহাসিক পৌরভবন, ভেতরের হল, কৈবর্ত্য স্মৃতি মনুমেন্ট, জীবন দিয়ে পদ্মা গর্ভ থেকে দুই নারী উদ্ধারকারীর আবক্ষ ভাস্কর্য, দৃষ্টিনন্দন RM লেখা প্রাচীর, লেডিস পার্ক ধ্বংস করে হয়েছে শপিংমল। জিন্নাহ হল তথা মাদার বখশ্ হল এখন ভোজনালয়৷ জেলা পরিষদ হলের নীচতলায় আর্ট গ্যালারি ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বাতিল করে এখন ভোজনালয়। উপরতলার ভাড়া সাংস্কৃতিক কর্মীদের নাগালের বাইরে। রাজা প্রমদা নাথ টাউন হল এখন রাজশাহী এসোসিয়েশন শপিং কমপ্লেক্স কাম ভোজনালয়। নগরীতে মননশীলতার চর্চা এভাবেই থেমে গেছে। তারুণ্য ঝুঁকছে ভিন্ন পথে। অক্সফোর্ড, লন্ডন, জেনেভা, প্যারিস, জার্মানী, সিঙ্গাপুর, দিল্লি, কোলকাতা, ভুটানে ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষিত হতে দেখেছি৷ এগুলি নষ্ট করা বাপদাদার ছবি বিকৃত বা ধ্বংসের মত অপরাধ। মানুষের স্মৃতিতে ছাপ রাখা স্থাপনা ধ্বংস করা সাংস্কৃতিক অপরাধ যা হৃদয়ে আঘাত করে। পূর্বপুরুষের ভালো কীর্তি নতুন প্রজন্মকে যেমন উদ্বুদ্ধ করে। তেমনই মন্দ কিছু তাদের সাবধান করে দেয়। সংরক্ষিত হচ্ছে হ্যানোভারের বেলসেন বধ্যভূমি যা হিটলারের অপকীর্তি। তা জার্মান সেনাদের পর্যন্ত ভিজিট করানো হয় যাতে অতীতের মত ভুল তাঁরা না করেন। আমাদের কয়টি বধ্যভূমি সযত্নে সসম্মানে সংরক্ষিত হয়েছে? কলকাতা পৌরসভায় তালিকাভুক্ত হেরিটেজ আর্কিটেক্ট আছেন যাঁরা ডিজাইন অবিকল রেখে রিনোভেসনে সহযোগিতা করেন। অতীতে বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় বসবাসকারী কীর্তিমান ব্যক্তিদের সুনাম আজও আছে বিশ্বজুড়ে। তাঁদের ভিটা বিলুপ্ত, দখলীকৃত, পরিবর্তিত বা ধ্বংসের পথে। তাঁদের গৌরব রাজশাহীর অহংকার হিসেবে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধকরণে কাজে লাগানো উচিত। লন্ডনের বহু ভবনে গোল নীল চাকতির পরিচিতি লিপি লাগানো আছে। যাতে লেখা ‘স্যার আইজাক নিউটন ওয়ার্কড্ হিয়ার।’ ”রামমোহন রায় ইনডিয়ান স্কলার এন্ড রিফরমার লিভড হিয়ার” এরকম। ( ছবি কমেন্টে) লন্ডন সারা দুনিয়া থেকে লন্ডনে যাওয়া মনিষীদের গৌরব ধারণ করেছে। আমরা বিতাড়ন করেছি। প্রকৃতপক্ষে সারাদেশের চিত্র কমবেশি একইরকম। সংরক্ষণ হলে দেশ বিদেশের লাখো বাঙালি পর্যটক আগ্রহী হতেন। দানে তৈরী বা ভিটায় নির্মিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দাতাদের নাম ও স্মৃতি সংরক্ষিত হলে নব্য ধনীদের একটি অংশ হয়তো সামাজিক কাজে উৎসাহিত হবেন। জনকল্যাণমূখী প্রতিষ্ঠান গড়বেন।