আনোয়ারুল ইসলাম,রানীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি।। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলার এক জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে ফিরে আসার পরই থানার এক উপ-পরিদর্শক (এসআই)সহ ৬ পুলিশ সদস্যকে হঠাৎ করে একযোগে ক্লোজড্ করে নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) উত্তম কুমার প্রসাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি জেলা পুলিশ লাইনে ওই ৬ পুলিশ সদস্যকে সংযুক্ত করার পর বিষয়টি একরকম ধামাচাপাই ছিল। তবে পরে তা প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়।
কানাঘুষা চলছে, লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকায় জুয়ার আসর থেকে ছয় জুয়াড়িকে আটকের পর ‘মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া’র কারণেই হয়তো তাদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তবে থানায় মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী তাদের প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এর সঙ্গে কোনো অভিযোগের সম্পর্ক নেই বলে দাবি করা হয়েছে।
প্রত্যাহার হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন– উপপরিদর্শক (এসআই) এরশাদ আলী, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) গৌতম চন্দ্র রায়, আনিছুর রহমান মোল্লা, সাদেকুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও ডিএসবি রেন্টু আলম।
এলাকাবাসীরা বলছেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) এরশাদসহ ছয় পুলিশ সদস্য উপজেলার লেহেম্বা ইউনিয়নের কোচল এলাকায় অভিযানে যান। সেখানে মানিক নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে জুযার আসরে অভিযান চালিয়ে পুলিশদল ইউপি সদস্য শাহাজাহন আলীসহ মোট ছয়জন জুয়াড়িকে আটক করেন।
এসময় ইউপি সদস্য শাহাজাহান বাদে অপর পাঁচজনের হাতে হাতকড়া লাগানো হয়। পরে দেন দরবার করে প্রায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে জুয়াড়িরা ঘটনাস্থল থেকে ছাড়া পান।
এবিষয়ে ইউপি সদস্য শাহাজাহান আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুরুতে বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে পরে তিনি ঘটনার কথা স্বীকার করেন।
ওই জুয়ার আসরে থাকা দুই ব্যক্তির মধ্যে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, পুলিশ দেখার সঙ্গে সঙ্গেই স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালামকে তিনি ফোন দেন। ইউপি চেয়ারম্যান ঘটনা শুনে পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু পুলিশ কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করে।
অপরজন বলেন, পুলিশ ঘরে ঢুকেই তাদেরকে গালিগালাজ করে ও চড়–থাপ্পড় লাথি মারে। সবাইকে তল্লাশি করে। তাতে ইউপি সদস্য শাহাজাহানের কাছে ১ হাজার ৬০০ টাকা, একজন ধান ব্যবসায়ীর কাছে ৫১ হাজার টাকা, অন্য দুজনের কাছে ২৩ হাজার টাকাসহ মোট ৬ জনের কাছে প্রায় এক লাখ টাকা পান। টাকাগুলো পুলিশ নিয়ে নেয়। ইউপি সদস্য শাহাজাহান ছাড়া সবার হাতে হ্যান্ডকাফ লাগায়। পরে প্রায় দুই লাখ টাকার বিনিময়ে তারা পুলিশের কাছ থেকে ঘটনাস্থলেই ছাড়া পান। ওই ব্যক্তি আরও বলেন, তাদের হাতের হ্যান্ডকাফ খুলে পাঁচজনের কাছ থেকে ভিডিওসহ বক্তব্য নেওয়া হয়। সেখানে তাদের কাছে কোনো টাকা–পয়সা নেওয়া হয়নি মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।
লেহেম্বা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবুল কালাম মোবাইল ফোন বলেন, ঘটনাটি একজন তাকে জানিয়েছিল। তিনি মোবাইলে কথা বলতে চাইলেও দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা তার সঙ্গে কথা বলতে চাননি। তবে তিনি শুনেছেন টাকার বিনিময়ে ওই জুয়াড়িদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এবিষয়ে বৃহস্পতিবার ২২ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহার হওয়া উপপরিদর্শক (এসআই) এরশাদ আলীর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘’এগুলো আর কি বলব, মানুষের উপকার করলে এই হয়।”
রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা বলেন, টাকার বিনিময়ে জুয়াড়িদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে-এমন কোনো অভিযোগ তিনি জানেন না। তবে ঘটনার সত্যতা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ঠাকুরগাঁও জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) উত্তম প্রসাদ পাঠক মোবাইল ফোনে বলেন, “..ছয়জনকে ক্লোজ করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। “