ঢাকা , সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫, ২৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মুরাদনগরের আলোচিত ট্রিপল মার্ডার, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মাদকের বিরুদ্ধে নারী-শিশুদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন চারদিন পর চন্দ্রঘোনা-রাইখালী নৌ রুটে ফেরি চলাচল শুরু মুন্নু সিরামিকসের চেয়ারম্যানসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছে দুদক রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক নির্বাচনে ৮০ হাজারের বেশি সেনাসদস্য দায়িত্বে থাকবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা চাচা ও চাচাতো ভাই কর্তৃক কিশোরীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, ছড়িয়ে দেওয়া হলো ভিডিও কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র চন্দ্রঘোনায় বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা সাংবাদিক তুহিন হত্যার প্রতিবাদে খোকসায় মানববন্ধন এবার ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি নিহত ২, আহত ১৭

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

সাংবাদিক
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এমপি ও দলটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁর বোন ও কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক করে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকালে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আয়োজিত বিক্ষোভ রাস্তায় গড়ালে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন এমপিকে আটক করে পুলিশ।

পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, রাস্তায় রাজনীতিবিদ ও বিপুলসংখ্যক দলীয় কর্মীর ভিড়। কেউ রাস্তায় বসে আছেন, কেউ পতাকা ও ব্যানার হাতে স্লোগান দিচ্ছেন। অনেকে পুলিশ ও তাদের ব্যারিকেডের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছেন।

কংগ্রেসের ‘ইন্ডিয়া’ জোট আজ দিনের শুরুতেই নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে মিছিল নিয়ে যায়। ভবনটি ভারতের পার্লামেন্টে ভবন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। পুলিশ পার্লামেন্টের আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কিছু বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারী এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

পুলিশের বাধায় একপর্যায়ে মিছিল থেমে যায়। বিক্ষোভস্থলের আগের কিছু ফুটেজে দেখা যায়, রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ও শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউতের মতো জ্যেষ্ঠ নেতারা রাস্তায় বসে আছেন। তাঁদের চারপাশে স্লোগানে মুখর প্রতিবাদকারীরা ঘিরে রেখেছে। এই বিক্ষোভের কারণে আজ ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষই দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন যোগসাজশ করে ভোটার তালিকা কারসাজি এবং ভোট জালিয়াতি করছে।

এ অভিযোগের সূত্রপাত গত বছরের মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের সময়। বিরোধী জোট—কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) ও এনসিপির (শারদ পাওয়ার) দাবি, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা বদলে বিজেপির জয় নিশ্চিত করেছে। তাঁরা উল্লেখ করেছেন, রাজ্যের কেন্দ্রীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস পর হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে নতুন ভোটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বড় অসংগতি।

কর্ণাটকের লোকসভা নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। গত সপ্তাহে রাহুল গান্ধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দিয়ে তাঁর অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেন এবং তাঁর দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন যেন ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে। যাতে এই তালিকার বিষয়ে অনুসন্ধান করা যায়।

বিহারে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ প্রক্রিয়া নিয়েও ক্ষোভ জমেছে বিরোধীদের মধ্যে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে।

আবেদনকারীদের দাবি, এটি বেআইনি—নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার বাইরে—এবং এর সময় নির্ধারণও সন্দেহজনক। তাঁদের সতর্কবার্তা, তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের আপিল করার যথেষ্ট সময়ও মিলবে না। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপির নির্দেশেই এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, যাতে ঐতিহ্যগতভাবে তাঁদের পক্ষে ভোট দেওয়া ভোটারদের বাদ দেওয়া যায়।

এ ছাড়া, ভোটার পুনঃ যাচাইয়ের জন্য আধার বা এমনকি নির্বাচন কমিশনের নিজের পরিচয়পত্রের মতো সাধারণ সরকারি পরিচয়পত্র বাতিল করায় প্রশ্ন উঠেছে। যদিও আদালত এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছে, তবে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যেন প্রকৃত ভোটারদের বাদ না দেওয়া হয় এবং প্রায় ৬৫ লাখ বাদ পড়া ভোটারকে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়।

সব অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, তাদের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগের বিরুদ্ধেও তীব্র ভাষায় সওয়াল করেছে—তাঁকে হলফনামায় স্বাক্ষর করে প্রমাণসহ দাবি জানানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৭:৫৯:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
৫১৮ Time View

রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আটক

আপডেটের সময় : ০৭:৫৯:৪১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের এমপি ও দলটির সাবেক প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধীকে আটক করেছে দিল্লি পুলিশ। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাঁকে আটক করা হয়। এ সময় তাঁর বোন ও কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে আটক করে পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, আজ সোমবার সকালে দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আয়োজিত বিক্ষোভ রাস্তায় গড়ালে রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীসহ বিরোধী দলের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন এমপিকে আটক করে পুলিশ।

পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে বিক্ষোভস্থল থেকে পাওয়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা গেছে, রাস্তায় রাজনীতিবিদ ও বিপুলসংখ্যক দলীয় কর্মীর ভিড়। কেউ রাস্তায় বসে আছেন, কেউ পতাকা ও ব্যানার হাতে স্লোগান দিচ্ছেন। অনেকে পুলিশ ও তাদের ব্যারিকেডের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করছেন।

কংগ্রেসের ‘ইন্ডিয়া’ জোট আজ দিনের শুরুতেই নির্বাচন কমিশনের দপ্তরে মিছিল নিয়ে যায়। ভবনটি ভারতের পার্লামেন্টে ভবন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে। পুলিশ পার্লামেন্টের আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দেয়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে কিছু বিক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারী এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

পুলিশের বাধায় একপর্যায়ে মিছিল থেমে যায়। বিক্ষোভস্থলের আগের কিছু ফুটেজে দেখা যায়, রাহুল গান্ধী, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব ও শিবসেনা (ইউবিটি) নেতা সঞ্জয় রাউতের মতো জ্যেষ্ঠ নেতারা রাস্তায় বসে আছেন। তাঁদের চারপাশে স্লোগানে মুখর প্রতিবাদকারীরা ঘিরে রেখেছে। এই বিক্ষোভের কারণে আজ ভারতীয় পার্লামেন্টের দুই কক্ষই দুপুর ২টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন বিজেপি ও নির্বাচন কমিশন যোগসাজশ করে ভোটার তালিকা কারসাজি এবং ভোট জালিয়াতি করছে।

এ অভিযোগের সূত্রপাত গত বছরের মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনের সময়। বিরোধী জোট—কংগ্রেস, শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) ও এনসিপির (শারদ পাওয়ার) দাবি, নির্বাচন কমিশন ভোটার তালিকা বদলে বিজেপির জয় নিশ্চিত করেছে। তাঁরা উল্লেখ করেছেন, রাজ্যের কেন্দ্রীয় নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস পর হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে নতুন ভোটার সংখ্যা বেড়ে যাওয়া বড় অসংগতি।

কর্ণাটকের লোকসভা নির্বাচন নিয়েও একই ধরনের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। গত সপ্তাহে রাহুল গান্ধী ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা দিয়ে তাঁর অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ উপস্থাপন করেন এবং তাঁর দাবি পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি দাবি করেন, নির্বাচন কমিশন যেন ভোটার তালিকার খসড়া প্রকাশ করে। যাতে এই তালিকার বিষয়ে অনুসন্ধান করা যায়।

বিহারে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ প্রক্রিয়া নিয়েও ক্ষোভ জমেছে বিরোধীদের মধ্যে। নির্বাচনের কয়েক মাস আগে নির্বাচন কমিশনের এই উদ্যোগকে তাঁরা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে মামলা হয়েছে।

আবেদনকারীদের দাবি, এটি বেআইনি—নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতার বাইরে—এবং এর সময় নির্ধারণও সন্দেহজনক। তাঁদের সতর্কবার্তা, তালিকা থেকে বাদ পড়া ভোটারদের আপিল করার যথেষ্ট সময়ও মিলবে না। বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপির নির্দেশেই এই প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে, যাতে ঐতিহ্যগতভাবে তাঁদের পক্ষে ভোট দেওয়া ভোটারদের বাদ দেওয়া যায়।

এ ছাড়া, ভোটার পুনঃ যাচাইয়ের জন্য আধার বা এমনকি নির্বাচন কমিশনের নিজের পরিচয়পত্রের মতো সাধারণ সরকারি পরিচয়পত্র বাতিল করায় প্রশ্ন উঠেছে। যদিও আদালত এই বিশেষ সংশোধন প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে অনুমতি দিয়েছে, তবে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছে যেন প্রকৃত ভোটারদের বাদ না দেওয়া হয় এবং প্রায় ৬৫ লাখ বাদ পড়া ভোটারকে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয়।

সব অভিযোগের জবাবে নির্বাচন কমিশন কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলেছে, তাদের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য। কমিশন রাহুল গান্ধীর অভিযোগের বিরুদ্ধেও তীব্র ভাষায় সওয়াল করেছে—তাঁকে হলফনামায় স্বাক্ষর করে প্রমাণসহ দাবি জানানোর চ্যালেঞ্জ দিয়েছে।