বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া প্যাসিফিকের সিএসই ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র এডমিন অফিসার ফারুক হোসেন গত সোমবার (১৩ মার্চ) আত্মহত্যা করেছেন।
তার আত্মহত্যার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মুস্তাফিজুর রহমান ও তার সহকারী জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা তামিম জোবায়েরকে দায়ী করে এর বিচার চেয়েছেন তার ভাই ফরিদ হোসেন।
একইসঙ্গে ফারুক হোসেনের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও ট্রাস্টি বোর্ডের কাছে আবেদন করেছে তার পরিবার। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা না হলেও ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়ার পর মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছে পরিবার।
মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগে তার ভাই ফরিদ বলেন, আমার বড় ভাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৫ বছর যাবত কর্মরত ছিলেন। আমি জানতে পেরেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান, তার সহকারী তানিম জুবায়ের তার দুইজন পিয়নসহ ডেস্কের ফাইল গোপন করে দীর্ঘদিন যাবত মানিসকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। কখনো কখনো তাকে রুমের ভেতরে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করতেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার ভাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। ফোনে ও মুখোমুখি নানা রকম মামলা-হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
এই অবস্থায় তিনি সর্বশেষ রোববার ১২ মার্চ অফিস করেন এবং ১৩ মার্চ মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। তাকে মানসিক নির্যাতনের সত্যতা সিএসই ডিপার্টমেন্টের সকল সহকর্মী ও প্রতিষ্ঠানের অনেকেই অবগত আছেন বলে দাবি করেন তিনি।
অন্যদিকে, তার মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মুস্তাফিজুর রহমান ও জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানিম জুবায়েরকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
ফারুকের আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী রেজিস্টারকে অপসারণের দাবিতে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে তারা চার দফা দাবি জানিয়েছেন। এ ঘটনার দ্রুত তদন্ত করে শাস্তি দেওয়া ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রেজিস্টারকে তার পদ ও সব কার্যক্রম থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার চেয়েছেন তারা।
একই সঙ্গে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দ্বারা হয়রানি, মানহানি, অপমান ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ করে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা, কতিপয় কর্মকর্তা মিলে আলাদা প্রশাসনিক কাঠামোর বলয় ভাঙা এবং তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদতদানকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। রেজিস্টারের অধীনস্থদের নিয়ম বহির্ভূত কাজে বাধ্য করা, জোরপূর্বক চাকরিচ্যুত, প্রমোশন আটকানো এমনকি গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েবসহ সকল অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের ব্যবস্থা করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর কামরুল আহসান বলেন, এ ঘটনায় ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিট আজ থেকেই কাজ শুরু করেছে। পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে আমরা দফায় দফায় বৈঠক করছি। আত্মহত্যার প্ররোচনায় যদি কারো সম্পৃক্ততা মিলে অবশ্যই তাকে শাস্তি দেওয়া হবে।