Imam Hossain
লোকাল কনফারেন্স অফ ইয়ুথ (LCOY), যুব-নেতৃত্বাধীন জলবায়ু আন্দোলনের একটি প্লাটফর্ম। ৮ই অক্টোবর বাংলা একাডেমিতে পর্দা নেমেছে এর যুব সম্মেলনের দ্বিতীয় আসরের, যা বাংলাদেশী তরুণদেরকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে। সম্মেলনে জলবায়ু অভিযোজন, যুব-নেতৃত্বাধীন আন্দোলন, শিক্ষা, সহযোগিতা, খাদ্য ও কৃষি, পানি এবং প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনা করা হয়। গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইম্প্রুভড নিউট্রিশন (GAIN) আয়োজিত এই কনফারেন্স এ কো-কনভেনর হিসেবে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, সিনজেন্টা ফাউন্ডেশন ফর সাস্টেইনেবল এগ্রিকালচার ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং ইউএনডিপি বাংলাদেশ এবং স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার হিসেবে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট, মালালা ফান্ড ও বাংলাদেশে অবস্থিত সংযুক্ত আরব আমিরাত দুতাবাস ও সুইডেন দূতাবাস সহ আরও ১৩ টি যুব সংগঠন প্রি-ইভেন্ট এবং প্রধান সম্মেলন অংশগ্রহন করে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের প্রায় ১৫০০০ জন তরুণকে (অনলাইন, অফলাইন) যুক্ত করা সম্ভব হয়েছে। সারা বাংলাদেশ থেকে ৩০০ জনেরও অধিক তরুণ জলবায়ুকর্মী, জাতিসংঘের প্রতিনিধি, সরকারি প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, গবেষক ও শিক্ষাবিদরা এই সম্মেলনে যোগদান করেন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে আবদুল মুহিমিন বিন ফারুক, LCOY বাংলাদেশ ২০২৩-এর ফোকাল পয়েন্ট, তার বক্তব্যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যুবদের মধ্যে ঐক্যের চেতনা জাগিয়ে তোলার কথা বলেছেন। বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের টিম লিড, এডউইন কোয়েককোক ‘ইউরোপীয় সবুজ চুক্তি’-এর সাফল্যের জন্য তরুণ জলবায়ু কর্মীদের কৃতিত্ব দিয়েছেন। ডঃ সুসান ভাইজ, অফিসার ইন চার্জ- ইউনেস্কো, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমাধান-ভিত্তিক পদ্ধতির আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় উপমন্ত্রি জনাব হাবিবুন নাহার, এমপি. জলবায়ু সম্পর্কিত কার্যক্রমে তরুণদের অগ্রণী ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নিজেদের গড়ে তোলার কথা বলেন। ড. রুদাবা খন্দকার, কান্ট্রি ডিরেক্টর, GAIN, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের দায়বদ্ধতার উপর জোর দেন। প্রথম দিনের সেশনে উপস্থিত থেকে জলবায়ু মোকাবেলায় যুব নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ রুহুল আমিন তালুকদার, গেইন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফ এ ও) অ্যাকশনএইড, ইয়ুথ পলিসি ফোরাম, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন সংঘঠনের এর প্রতিনিধিবৃন্দ ।
৯ অক্টোবর, সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনটি যুবদের জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগসমূহ আলোচনা করে শুরু হয়৷ বিশিষ্ট বক্তাদের মধ্যে ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, যুব উন্নয়ন ও ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) জনাব এম এ আখের, ইউএনডিপি বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাহমুদুল হাসান, আইক্যাড বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোঅর্ডিনেটর সুমাইয়া বিনতে সেলিম এবং ইয়ুথনেট গ্লোবালের এক্সেকিউটিভ কোঅর্ডিনেটর সোহানুর রহমান। বক্তাগণ আলোচনায় জলবায়ু উদ্যোগে তরুণদের সম্ভাবনার ওপর জোর দিয়েছেন।
একটি আকর্ষনীয়ন মঞ্চনাটক, “হাওরের জলকথা” (জলভূমির গল্প), জলবায়ু পরিবর্তনের পরিণতিগুলিকে চিত্রিত করেছে, জলবায়ু আন্দোলনের আহ্বানকে আরও জাগিয়ে তুলেছে৷
সমাপনী অনুষ্ঠানে জলবায়ু মোকাবেলার ক্ষেত্রে তরুনদের সাফল্য উদযাপন করা হয়। নিজ আলোচনায় LCOY বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট মেহেদী হাসান বাপ্পি, পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় জলবায়ু ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার, অভিযোজন এবং স্থিতিস্থাপকতা, ক্ষতি এবং ক্ষতি মোকাবেলা, জলবায়ু কর্ম ও ক্ষমতায়ন (ACE), শক্তি, স্বাস্থ্য, খাদ্য, এবং কৃষি, জল, প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য, প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন ইত্যাদির উপরে ১১ টি যুব দাবি তুলে ধরেন , যা এই নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কনফারেন্স অফ ইয়ুথ (COY) এবং কনফারেন্স অফ পার্টিস (COP)-এ LCOY বাংলাদেশের পক্ষ থেকে একটি বিস্তারিত বিবৃতি বাংলাদেশ ইয়ুথ স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করা হবে। মালালা ফান্ডের কান্ট্রি ডিরেক্টর মোশাররফ তানসেন মেয়েদের শিক্ষা এবং জলবায়ু কর্মের পক্ষে কথা বলেছেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশের অ্যাসিস্ট্যান্ট রেসিডেন্ট রিপ্রেজেটেন্টিভ আনোয়ারুল হক পরিবেশ রক্ষায় স্বেচ্ছাসেবী কর্মকাণ্ডকে উৎসাহিত করেছেন, এবং ভিডিও বার্তায় আরব আমিরাতের মহামান্য রাষ্ট্রদূত আবদুল্লাহ আলী আবদুল্লাহ খাসেফ আল-হামুদি সম্মেলনের সাফল্যের প্রশংসা করেছেন। সমাপনী সেশনের সভাপতি ফারাহ কবীর, কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় তরুণদের ঐক্যতা ও শক্তির উপর বিশেষভাবে জোর দেন ।
এই প্ল্যাটফর্মে যুব নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ সৃষ্টি এবং যুবদের অর্থপূর্ণভাবে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় ও বৈশ্বিক পলিসি আলোচনাকে বেগবান করার একটি দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন জাওয়াদ আলম, হেড অফ অপারেশনস (LCOY বাংলাদেশ)। এই অনুপ্রেরণাদায়ক সম্মেলনটি যুবসমাজকে জলবায়ু সংরক্ষনের প্রচেষ্টায় অটল থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। এটি যুবকদের উদ্ভাবনী কর্মকান্ডকে স্বীকৃতি প্রদান করেছে এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে। দুই দিনের এই সম্মেলন জলবায়ু আন্দোলনে বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করবে বলে মত দিয়েছেন উপস্থিত সকলেই।