মেঘলা আকাশের নিচে শুরু হলো ম্যাচ, উইকেটে ছিল সবুজ ঘাস, শুরুটা হলো জাকির হাসানের বিদায় দিয়ে। পেসারদের জন্য আদর্শ কন্ডিশনে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাট করতে দিয়ে সুবিধা করতে পারল না আফগানিস্তান। উল্টো নাজমুল হোসেন শান্ত আর মাহমুদুল হাসান জয়ের ঝলমলে ব্যাটিংয়ে দারুণ একটা দিন পার করেছে বাংলাদেশ।
দিনশেষে স্বাগতিকদের নেই পাঁচ ব্যাটার। বড় রানের স্বপ্ন এখনও টিকে আছে, কিন্তু কমেছে সম্ভাবনা। সকালের রঙিন শুরু শেষ বিকেলে হয়ে যাচ্ছিল মলিন। যদিও মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ হতে দেননি সেটি।
মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে একমাত্র টেস্টে মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান। প্রথম দিনশেষে ৭৯ ওভার ব্যাট করে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ৩৬২ রান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে এই রান তুলেছে বাংলাদেশ। সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, হাফ সেঞ্চুরি পান জয়। মুশফিকুর রহিম ৬৯ বলে ৪১ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ৬৬ বলে ৪৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শুরু করবেন।
এদিন একটি রেকর্ডও গড়েছে বাংলাদেশ। মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টেস্টের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ ৩৩০ রান করেছে স্বাগতিকরা। ঘরের মাঠে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৩৭৪ রান করে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে ২০১৭ সালে দ্বিতীয় দিনে একদিনে সর্বোচ্চ ৩৮৮ রান করে তারা।
সকালে মেঘলা আকাশ আর ঘাসের পিচে শুরুটা ভালো করে আফগানিস্তানের পেসাররা। দ্বিতীয় ওভারে তারা পেয়ে যায় উইকেটের দেখাও। দুই বলে ১ রান করে জাকির হাসানের ব্যাট হালকা ছুয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে যায়। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় আফগানরা। ২২তম বোলার হিসেবে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান নিজাতউল্লাহ মাসুদ।
পেসারদের সাফল্যের আশায় ১৪ ওভার বোলিং করান দলটির অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শহিদী। স্পিনারদের এনেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না তারা। আফগান বোলাররা প্রায়ই ভালো বল করছিলেন, বিশেষত উইকেটের বাউন্স কাজে লাগিয়ে পেসাররা। কিন্তু ধারাবাহিকতা ছিল না তারা।
সময়ের সঙ্গে আরও ধার হারায় আফগানদের বোলিং, শান্ত ও জয় মেলে ধরেন নিজেদের। দ্বিতীয় সেশনে এসে শুরুতে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান মাহমুদুল হাসান জয়, পরে তিন অঙ্ক ছুয়েছেন শান্ত। আমির হামজা হোতাকের বল আলতো করে ঠেলে দিয়ে দৌড় শুরু করেন তিনি। টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি নিশ্চিত হওয়ার পর শান্ত দৌড়ে যান ড্রেসিংরুমের দিকে। এরপর ব্যাটে উড়ন্ত চুমু এঁকে দেন তিনি।
শান্তর সঙ্গে দুইশর বেশি রানের জুটি ভাঙে জয় আউট হলে। কিছুতেই যখন উইকেটের দেখা মিলছিল না, তখন অনিয়মিত বোলার রহমত শাহকে নিয়ে আসেন হাশমাতুল্লাহ। তাকেই উইকেট দেন জয়। লেট কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেওয়ার আগে এই ব্যাটার ৯ চারে ১৩৭ বলে ৭৬ রান করেন।
প্রথম দুই সেশন বাংলাদেশ নিজেদের করে নিলেও তৃতীয়টিতে এসে ঘুরে দাঁড়ায় আফগানরা। চার নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে মুমিনুল হক ইনিংস বড় করতে পারেননি। মাসুদের লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল মুমিনুলের ব্যাট ছুয়ে উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে যায়। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে সফল হয় আফগানরা।
সেঞ্চুরি তুলে দ্বিশতকের দিকে ছুটতে থাকেন শান্ত। কিন্তু এই ব্যাটারও হঠাৎই যেন হয়ে যান অশান্ত। শুরুতে মাসুদের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হন তিনি। কিন্তু সাজঘরের পথ ধরার পর আম্পায়ার নো বলের সিগনাল দেন। এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি শান্ত। আমির হামজার বল এগিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান শান্ত। ২৩ চার ও দুই ছক্কার ইনিংসে ১৭৫ বলে ১৪৬ রান করেন তিনি।
টেস্টে বাংলাদেশের ১২তম অধিনায়ক হিসেবে ম্যাচে টস করেছিলেন লিটন দাস। কিন্তু ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসটা তার ভালো কাটেনি একদমই। ১৫ বলে ৯ রান করে জাহির খানের দেরিতে টার্ন করা বলে স্লিপে ইবরাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। এরপর দলের হাল ধরেন মুশফিক ও মিরাজ। এ দুজনের ব্যাটে বাংলাদেশ দিনশেষ করে।
দিনজুড়ে বাংলাদেশের ব্যাটারদের সেভাবে কখনোই টানা পরীক্ষার ভেতর রাখতে পারেননি আফগানিস্তানের বোলার। জাকির হাসান ছাড়া বাকি প্রায় সব ব্যাটারই উইকেট দিয়ে এসেছেন রীতিমতো উপহার হিসেবে। দ্বিতীয় দিনে মুশফিক ও মিরাজের সামনে ইনিংস লম্বা করার চ্যালেঞ্জ থাকছে, আফগান বোলারদের সামনে ধারাবাহিকতা ধরে রাখার।