দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কর্মযোগ্যতা বৃদ্ধিতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে উপাচার্যদের আহবান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী। উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তিনি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের এ আহ্বান জানান।
রোববার (২৩ জুন) ৪৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান বলেন, সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিক্ষা ও গবেষণা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, আমাদের শিক্ষার্থীরা কর্মযোগ্যতায় অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিষয়ভিক্তিক জ্ঞানের পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থার সাথে শিক্ষার্থীদের সরাসরি সংযোগ ঘটাতে হবে, তাদেরকে কর্মক্ষেত্রের উপযোগী দক্ষতা প্রদান করতে হবে।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার সেন্টারের মাধ্যমে বেসিক ডিজিটাল লিটারেসি, প্রয়োজনীয় সফট স্কিলস, ভাষা শিক্ষা ও যোগাযোগ দক্ষতা প্রদানের আহ্বান জানান।
শিক্ষামন্ত্রী নব প্রতিষ্ঠিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জেলার সরকারি কলেজগুলোতে অধিভুক্ত করে শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পরামর্শ দেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অবকাঠামো এবং নতুন বিভাগ না খোলারও পরামর্শ দেন তিনি।
অধিভুক্ত কলেজের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য একাডেমিক মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় শিক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলারও আহবান জানান তিনি।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কারিকুলামে বৈচিত্র্য নিয়ে আসা, শিক্ষকদের দিয়ে একাডেমিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি, ল্যাব ও অবকাঠামো সুবিধা বিনিময় করা, গবেষণার ফলাফল বাধ্যতামূলকভাবে প্রকাশের ব্যবস্থা এবং নিজস্ব র্যাংকিং ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ প্রদান করেন।
ইউজিসি চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, প্রফেসর ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, প্রফেসর ড. হাসিনা খান, প্রফেসর ড. মো. জাকির হোসেন, সচিব ড. ফেরদৌস জামান।
এছাড়া, অনুষ্ঠানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার এবং সফলভাবে এপিএ বাস্তবায়নে অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াস উদ্দীন মিয়া।
অনুষ্ঠানে প্রফেসর আলমগীর বলেন, গুণগত শিক্ষা, গবেষণার মানোন্নয়ন, উদ্ভাবন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতুবন্ধন তৈরি এবং বিদেশি শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য এপিএ চুক্তি বাস্তবায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি সরকারের অন্যান্য কমিশনের মতো করে ইউজিসি’র স্বতন্ত্র বাজেট বরাদ্দ, বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত দাপ্তরিক বিষয় নিষ্পতির জন্য ইউজিসি’র মাধ্যমে সরাসরি আচার্যের কার্যালয়ে প্রেরণ, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেট বৃদ্ধি করা, ১নং গ্রেড প্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষদের জন্য নতুন গাড়ি ক্রয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ২০ শতাংশ ব্যবহার কমানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া, সমহারে পিএচডি ইনক্রিমেন্ট সুবিধা দেওয়া, পিএল একাউন্টে যুক্ত না করে বিদ্যমান পদ্ধদিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্ট পরিচালনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর প্রতি মন্ত্রী মহোদয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ নতুন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান অবস্থান শিক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এপিএ বাস্তবায়নে ১ম স্থান অর্জনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ২য় স্থান অর্জনকারী শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৩য় স্থান অর্জনকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সার্টিফিকেট ও সম্মাননা স্মারক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান।
কমিশনের অতিরিক্ত পরিচালক ও এপিএর ফোকাল পয়েন্ট বিষ্ণু মল্লিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসি’র পরিচালক, ৪৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তাসহ ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।