বিগত কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকার ও দেশটির বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এতে বিদ্রোহীদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী সদস্যরা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যদের ফিরিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। জানা গেছে, শিগগিরই দুই দেশের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে এই বিষয়ের নিস্পত্তি করা হবে। তবে আশ্রিত মিয়ানানমারের নিরাপত্তা রক্ষীদের কোন প্রক্রিয়ায় তাদের দেশে ফিরিয়ে দেয়া হবে তা নিয়ে দুই দেশের রাষ্ট্রদূতসহ কূটনীতি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত আছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহ ধরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমারের জান্তা সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এরই মধ্যে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া মর্টারশেল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসে পড়ে দুজন নিহত এবং গুলিতে শিশুসহ আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। ওপারের গোলাগুলিতে এপারে সীমান্ত এলাকার আতঙ্কিত নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তবে গত দুদিন ওপারে গোলাগুলি পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় ফিরতে শুরু করেছেন গ্রামবাসী। সীমান্ত এলাকায় গোলাগুলি কমলেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি ঘুমধুম সীমান্তের নয়াপাড়ায় বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) একটি অবিস্ফোরিত মর্টারশেল দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে খবর পেয়ে সেনাবাহিনী এসে সেটি নিষ্ক্রিয় করে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীর আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মধ্যকার ব্যাপক সংঘর্ষে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বিজিপির কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছেন বিজিপির ৩৩০ জন সদস্য। পালিয়ে আসা বিজিপির এই সদস্যদের নিরস্ত্রীকরণ করে খাবার ও আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়া বিজিপির ১০০ জন সদস্যকে প্রশাসনিক সুবিধা বিবেচনা করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে টেকনাফের হ্নীলাতে স্থানান্তর করা হয়েছে। তবে এখনও ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়া বিজিপি সদস্যদের স্থানান্তর করা হয়নি।
বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম জানান, গতকাল দুপুরে আশ্রয় নেয়া বিজিপির ১০০ জন সদস্যকে টেকনাফের দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি কর্মকর্তা মেজর শহীদুল ইসলাম জানান, গত মঙ্গলবার টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করা ৬৪ জন বিজিপি সদস্যকে টেকনাফের হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে। গতকাল তুমব্রু থেকে মিয়ানমারে ফেরতের উদ্দেশে নিয়ে আসা আরও ১০০ জন বিজিপি সদস্যদের হ্নীলার ওই একই বিদ্যালয়ে রাখা হয়। হ্নীলার ওই উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৬৪ জন বিজিপি সদস্যকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্ত হয়ে ওঠায় উত্তর ঘুমধুম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ঘুমধুম-তুমব্রু, জলপাইতলী সীমান্তের ২৪৩ জন বাসিন্দা গতকাল ঘরে ফিরেছেন। তবে সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা নিজ ঘরে ফিরতে শুরু করলেও আতঙ্ক কাটেনি।
স্থানীয়রা জানান, গত দুদিন ধরে ওপার থেকে গোলাগুলির কোনো শব্দ শোনা যায়নি। সীমান্ত পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ায় সবাই ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। বাজারগুলোয় বেড়েছে সাধারণ মানুষের আনাগোনা। দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এখনও আতঙ্ক কাটেনি সীমান্তে বসবাসরত বাসিন্দাদের।