কোপেনেহেগেন: ২৩শে জুন ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ – শুধু বাংলাদেশ নয় , এই উপমহাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ৭৫বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল । এই সময়ের মধ্যে অনেক রাজনৈতিক দলের জন্ম হলেও দলের কান্ডারীর ভুমিকায় যোগ্য সংগঠক না থাকায় , অনেক দলের বিলুপ্তি হয়েছে । বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ , কোন উচ্চ বিলাসী অবৈধ সেনা শাসকের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে , রাষ্ট্রের তহবিল তসরুপ করে, সেনা ছাউনিতে জন্ম হয়নি ! বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতির প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো । আর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন দেশপ্রেমিক দক্ষ সংগঠকের হাত ধরে এই দলের পুর্নতা পেয়েছে । আমি বিশ্বাস করি, ১৯৬৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ৬দফা দেবার প্রাক্কালে, বঙ্গবন্ধু যদি আওয়ামী লীগের বাহিরে গিয়ে অন্য একটি দলও প্রতিষ্ঠা করতেন , দেশের জনগণ তাই গ্রহন করতেন ! কারন ততোদিনে এই দেশের জনগণের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাসে প্রতীক হিসাবে শেখ মুজিব একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন । সুতরাং বাঙালীদের মুক্তির প্রতীক ও অবিসংবাদিত নেতা হিসাবে , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ – বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু ছিলেন এক ও অভিন্ন । প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই দলটি সবসময় প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের টার্গেটে ছিল; স্বাধীনতার পুর্বে – পাকিস্থানী চক্র , ১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যার পর – একাত্তরের পরাজিত জিয়া- মোস্তাক ঘাতকচক্র এবং ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসকদের টার্গেটে পরিনত হয় ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এইদেশটি যুদ্ধ করে ত্রিশলক্ষ মুক্তিকামী বাঙ্গালীর তাজারক্তের বিনিময়ে এই দেশটি সৃষ্টি হলেও , আমরা যেন ভুলে না যাই যে , এই বাংলাদেশে থেকে -খেয়ে একটি গ্রুপ মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছিলো এবং মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক , বাংলাদেশের স্রষ্টা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে – এই দেশকে পাকিস্থানের অঙ্গরাজ্য হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো । যেখানে স্বাধীনতার সকল লক্ষ ও অর্জনকে নির্বাসিত করেছিলো , সামরিক জান্তা খুনী জিয়া । সেখান থেকে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে জীবনের ঝুকি নিয়ে জাতির পিতার জ্যৈষ্ঠকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে এসে , আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ ও দেশের জনগণের মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন ।এদিকে খুনী জেনা. জিয়া রাষ্ট্রের টাকা খরচ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার গোপন মিশন নিয়ে মাঠে নেমে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে টার্গেট করেন , বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে । এটা স্পষ্ট যে, খুনী জিয়ার বহুমুখী ষড়যন্ত্র , ভঙ্গুর ও দুর্বল আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করে ধীরে ধীরে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত করে আজকের পর্যায়ে নিয়ে আসার মূল কারিগর ও সুদক্ষ সংগঠক , বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা । গত ৪৩ বছরে , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী ও সবচেয়ে জনপ্রিয় দল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন – জননেত্রী শেখ হাসিনা ।
শেখ হাসিনা – একাই দশ মহাথির: বিভিন্ন সময়ে টিভি টকশো , সংবাদ মাধ্যমে দেশপ্রেম ও দেশের উন্নয়নের জন্য ভিনদেশের উদাহরন দিয়ে আলোচকরা বাংলাদেশের একজন মহাথির মোহাম্মদের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন ! অথচ বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা , দেশ ও দলকে যেভাবে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা এদেশের মানুষ উপলব্ধি করেন বলেই আওয়ামী লীগের এতো জনপ্রিয়তা। একটি দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু পরিবারের যে অবদান তা পৃথিবীতে বিরল । আমার অবাক লাগে ভাবতে – জাতির পিতার কন্যাদ্বয়, জাতির পিতা হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন – এক মহৎ ও অভিনব কায়দায় ! তারা জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে এই হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছেন ও নিচ্ছেন । -দেশবিরোধী পরাজিত শক্তি জানতো যে, বাংলাদেশ সফল হলে , বাংলাদেশ শক্তিশালীভাবে পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে থাকলে ,শেখ মুজিব অনন্তকাল দেশের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবে ! তাই বাংলাদেশে শেখ মুজিবের স্বপ্ন – একটি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়ন করতে দেয়া হবে না ! এই জন্যই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে ! শেখ হাসিনাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে , এখনো তা অব্যাহত আছে । ঠিক একই লক্ষে , ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য খুনী জিয়াপুত্র , ঘাতক তারেক ইতিহাসের বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিলো !
এতোসব প্রতিকুলতার মাঝেও দেশী- বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে, বাংলাদেশকে একটি উন্নত , শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে জননেত্রী শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করছেন । একটি দরিদ্রদেশ থেকে আজ আমরা উন্নয়নশীল দেশের কাতারে এসেছি । ২০৪১ সালে লক্ষ – একটি উন্নতদেশের কাতারে সামিল হবে বাংলাদেশ । ইতিমধ্যে মানুষের যেসব মৌলিক অধিকার : অন্ন, বস্র, বাসস্থান,শিক্ষা ও চিকিৎসা , তা নিশ্চিত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার ।অন্ন: বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ং সম্পুর্ন , বিশ্বজুড়ে কভিড দুর্যোগের পর যুদ্ধরত পৃথিবীর অনেক সমস্যায়ও কেউ বলতে পারবে না , বাংলাদেশে কেউ কেউ না খেয়ে আছে । বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের কারনে প্রায় ১কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার । বস্ত্র : এক সময় পুরনো কাপড় আমদানী করা হতো অথচ বাংলাদেশে আজ আর কেউ পুরান কাপড় ব্যাবহার করে না ।বাসস্থান: ১৯৭২ সালে জাতির পিতার গৃহীত কর্মসুচী ভুমিহীন – গৃহহীন , অসাহায় ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসন কার্যক্রম , যা বঙ্গবন্ধু কন্যা ১৯৯৭ সালে পুনরায় শুরু করেছিলেন ! ২০১০ থেকে ওই কর্মসুচী সফল করার লক্ষে , জননেত্রী সরকার ইতিমধ্যে ৮ লাখ , ৬৭ হাজার, ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীনকে চার শতাংশ জমিসহ বাসস্থান করে দিয়েছেন , যেখানে প্রায় সাড়ে ৪৩ লক্ষ মানুষের আশ্রয়ের ব্যাবস্থা করেছেন আওয়ামী লীগ সরকার । শিক্ষা : শিক্ষা ক্ষেত্রে এক অভুতপুর্ব বিপ্লব ঘটিয়েছে , যেখানে এই বছর প্রায় ৩৩ কোটি ৫০ লাখ বই বিনামুল্যে দিয়েছে । সর্বশেষ চিকিৎসা: যদি চিকিৎসার সেবার কথা বলি , তাহলে কভিড কালীন স্বাস্থ্যসেবা ও ভ্যাক্সিনসহ কমিউনিটি ক্লিনিকের কথা সারাবিশ্বে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
দেশে যখন কেউ কেউ মালয়েশিয়ার মহাথিরকে খুঁজছে তখন তথাকথিত ওই টকশোর বুদ্ধি বিক্রেতাদের হীনমন্যতার কারনে দেশরত্ন শেখ হাসিনার কথা বা আওয়ামী লীগ কথা ইচ্ছে করে এড়িয়ে যান । অথচ আজ জলে সাবমেরিন, স্থলে -মেট্রোরেল , অন্তরীক্ষে – স্যাটালাইট , সমুদ্র সীমানাসহ শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের ফিরিস্তি লিখতে গেলে , মহাকাব্য লিখা যাবে ! জাতিসংঘসহ সারাবিশ্ব যখন শেখ হাসিনাকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসাবে অনুসরের কথা বলে , সেখানে আমাদের টকশোজীবিরা মহাথিরকে খুঁজে !
আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে পারি , চতুর্থ শিল্পবিপ্লবকে সামনে রেখে বাংলাদেশের স্মার্ট প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অনেক আগেই দশ- মহাথিরের কাজ একাই করেছেন । একইসাথে মালেয়শিয়ার মতো জনসংখ্যা আর প্রাকৃতিক সম্পদ থাকলে ,গত ১৫বছরে উন্নতদেশের প্রথম কাতারে থাকতো, বাংলাদেশ ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস , বাংলাদেশের ইতিহাস । দেশের মানুষের কল্যানে আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা –কর্মি, এই দলের নীতি – আদর্শ ধারন করে সামনে এগিয়ে যাবে কারন এই দলের আদর্শ: জাতির পিতা শেখ মুজিব ; অনুপ্রেরনা: দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
[লেখক: এম এ লিঙ্কন মোল্লা , সদস্য সচিব, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগ- সমন্বয় কমিটি ও সাবেক সভাপতি, ডেনমার্ক আওয়ামী লীগ।]