শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনে বইছে আগাম নির্বাচনী হাওয়া। এই আসনে বর্তমান এমপি প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক চাঁন। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ দুই উপজেলার নেতাদের। এই আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পেতে মাঠে নেমেছেন অন্তত ১২-১৩ জন তবে এর মধ্যে আলোচনায় প্রধানত তিনজন। এরা হলেন ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম এবং শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম লিটন ও বর্তমান এমপি এক সময়ের আমলা প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক চাঁন। তবে বর্তমান এমপি আলোচনায় থাকলেও তাঁর শারীরিক পরীস্থিতির কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না বলে মনে করেন অনেকে। তবে নৌকার একাধিক প্রার্থী থাকলেও এ ক্ষেত্রে অনেকটা নির্ভার বিএনপি। সম্ভাব্য প্রার্থিতার আলোচনায় দুজনের নাম এলেও জেলা বিএনপির সভাপতি ও দুবারের সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল মনোনয়ন পেতে পারেন বলে ধারণা। জেলা বিএনপির সভাপতি ও দুবারের সাবেক এমপি মাহমুদুল হক রুবেল এর আপন চাচা প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল হক চাঁন।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটির প্রায় শতাধিক এমপি মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। যারা দলীয় নেতাকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন, তৃণমূল পর্যায়ে যাদের যোগাযোগ কম এসব সাংসদরা এবার মনোয়নয় পাবেন না। এ ক্ষেত্রে মনোয়ন পাবেন দলের পোর খাওয়া নেতারা।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আগাম প্রচারণায় দৃশ্যমাণ তৎপরতা বেশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে। নিজের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে সভা-সমাবেশ, পোস্টার-লিফলেট বিতরণসহ সামাজিক অনুষ্ঠানে ছুটছেন মনোনয়ন-প্রত্যাশীরা। সেই সঙ্গে চলছে জোর লবিং। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বাড়াচ্ছেন সংযোগ। তবে বর্তমান এমপি ফজলুল হক নেতাকর্মীদের নিয়ে উদাসীন বলে অভিযোগ স্থানীয় নেতাদের।
আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী হতে এবারও মনোনয়ন চাইবেন এমপি ফজলুল হক চাঁন। তিনি তিন মেয়াদে এ আসনের এমপি। তবে এবার তার মনোনয়ন পাওয়া সহজ হবে না। তার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন স্থানীয় অধিকাংশ নেতা। এছাড়া শারীরিক পরিস্থিতির কারণেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না বলে অনেকের ধারণা।
জানা গেছে, এমপি ফজলুল হক চান এর আপন ভাই ডা. সেরাজুল হক বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হয়ে ১৯৯১ সনে এমপি হন। ১৯৯৪ সালের ২৮ অক্টোবর এমপি ডা. সেরাজুল হক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলে তিন মাস পর এই আসনে উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বয়সে তরুণ মাহমুদুল হক রুবেল প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন। শোনা যায়, এই সময়ে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন এমপি ফজলুল হক চান। তবে পারিবারিক সিদ্ধান্তে মাহমুদুল হক রুবেল নির্বাচন করায় তিনি আওয়ামী লীগের দিকে ধাবিত হন। এরপর ২০০৮ সালে নৌকার টিকিটে এমপিও হয়ে যান। এ আসন থেকে চাচা ফজলুল হক চাঁন নৌকা প্রতীকে তিন বার এবং ভাতিজা রুবেল দুই বার ধানের শীষ প্রতীকে এবং এক বার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মোট ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে দুই উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার দাবি, বর্তমান এমপি আসলে আওয়ামী ঘরানার লোক নন। এ বিষয়টা এলাকার সবাই জানে। এ ছাড়া নিয়োগ বাণিজ্য, ডিও লেটার বাণিজ্য, কাবিখা, কাবিটা, টিআর, জিআরসহ এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তিনি দুর্নীতি করেননি। এলাকায় কোনো উন্নয়নমূলক কাজ না হওয়ায় এমপি ফজলুল হক জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করেন এই নেতা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমপি ফজলুল হক নিয়োগ কেলেংকারির সঙ্গে জড়িত এমনটা জানিয়ে ঝিনাইগাতি উপজেলার একাধিক নেতা বলেন, ‘তার ভাই (বিএনপির সাবেক এমপি) ডা. সেরাজুল হক যখন নির্বাচন করতেন, ‘তিনি (ফজলুল হক) তাকে সার্বিক সহযোগিতা করতেন। তার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পর ভাতিজা নমিনেশন পেলে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য লবিং করেন এবং ২০০৮ সালে তা পেয়ে যান। এখনো তার সম্পর্ক বিএনপির লোকজনদের সঙ্গে বেশি।’
নৌকার মনোনয়ন চান এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে চান ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম। তিনি চতুর্থবারের মতো ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় থেকে নাইম দলীয় মনোনয়ন পেতে জনসংযোগে মাঠে নামেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
অপরদিকে, দীর্ঘ ৫২ বছরে বড় কোনো রাজনৈতিক দল ঝিনাইগাতীর মাটি থেকে এমপি প্রার্থী মনোনয়ন দেয়নি।
ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এমপির স্বাদ পাইনি ঝিনাইগাতী উপজেলা বাসি। এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে উপজেলাবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে গড়ে তোলার চেষ্টা করে আসছেন তিনি। উপজেলা বাঁসীও তার ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যমত পোষণ করে আসছেন। এছাড়া, এমপি ও ক্ষমতার সাধ বঞ্চিত দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও নাইমকেই এমপি হিসেবে পেতে চাইছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে ও মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন তিনি। অধিকারবঞ্চিত ঝিনাইগাতী উপজেলার উন্নয়নের স্বার্থে এ উপজেলার মাটি থেকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শিল্পপতি এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাঈমকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা।
তৃণমূল নেতাকর্মী ও জনতার দাবি, ৫২ বছর শ্রীবরদী উপজেলার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের দাবি মানতে হবে।
নাইম দলীয় মনোনয়ন পেতে গত ২২ বছর ধরে এই আসনের ২ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে জনসংযোগ চালিয়ে আসছেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে ও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দুই উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার, গ্রামেগঞ্জে ও পাড়া-মহল্লায়, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। ৫২ বছর ঝিনাইগাতীর মাটি থেকে এমপি প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়নি। তাই ঝিনাইগাতি উপজেলার আওয়ামী নেতাকর্মীসহ একটি বড় অংশের মানুষ আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবহেলিত অধিকার বঞ্চিত ঝিনাইগাতী উপজেলার দিকে চোখ তুলে তাকাবেন এবং নাইমকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন।
নৌকার প্রার্থী হতে চান মোতাহারুল ইসলাম লিটন
আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে চান শ্রীর্বদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোতাহারুল ইসলাম লিটন । সে লক্ষে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন তিনি। মোতাহারুল ইসলাম লিটন রাজনীতির জীবনে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, শ্রীর্বদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন শেষে শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন।