টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভ পর্বের চরম উত্তেজনার ম্যাচে পাকিস্তানকে ১ রানে হারিয়ে দারুণ জয় তুলে নিয়েছে জিম্বাবুয়ে। বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) পার্থে প্রথমে ব্যাট করে ১৩০ রান করেছিলো জিম্বাবুয়ে। জবাব দিতে নেমে ১২৯ রানে থামতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তান।
১৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামার পর শুরু থেকেই পাকিস্তানকে চেপে ধরে জিম্বাবুয়ে বোলাররা। ১০ ওভার শেষেও ৩ উইকেটে ৫৪ রান তুলেছিলো পাকিস্তান। জয় থেকে তখন ৬০ বলে ৭৭ রানের দূরত্ব। উইকেটে শান মাসুদ থাকায় তখনো দুশ্চিন্তা পেয়ে বসেনি পাকিস্তানের সমর্থকদের।
তবে মনে মনে একটা ভয় তো ছিলো। আসিফ আলীকে বসিয়ে এ ম্যাচে মোহাম্মদ ওয়াসিমকে খেলিয়েছে পাকিস্তান। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ একজন ব্যাটসম্যান কম নিয়ে খেলছেন বাবর-রিজওয়ানরা। তাই পাঁচে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়েছে লেগ স্পিনার শাদাব খানকে। ১৪তম ওভারে ভয়টা আরো জেঁকে বসে সিকান্দার রাজা হঠাৎ করেই অজন্তা মেন্ডিস কিংবা সুনীল নারাইন হয়ে ওঠায়! তার টানা দু’টি ‘নাকল বলে’ আউট শাদাব ও হায়দার আলী! জিম্বাবুয়ে অলরাউন্ডার হ্যাটট্রিক করতে না পারলেও তার সেই ওভারের পর জমে ওঠে ম্যাচ। ৩৬ বলে দরকার ৪৩, উইকেটে শান মাসুদ ও নেওয়াজ। তাদের পর আর কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান নেই!
শান মাসুদ সম্ভবত তা ভুলে গিয়েছিলেন। ১৬তম ওভারে সিকান্দারের দ্বিতীয় বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন ৩৮ বলে ৪৪ রান করে ম্যাচটা পাকিস্তানকে জেতানোর পথে থাকা মাসুদ। তখন সত্যি সত্যিই হারের চোখ রাঙানি দেখছিলো পাকিস্তান। নেওয়াজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষিক্ত মোহাম্মদ ওয়াসিমের দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত আর হারেনি পাকিস্তান।
১৪ বলে ৩২ থেকে ১৮ বলে ২৯ এবং তারপর শেষ দুই ওভারে (১২) সমীকরণটা ২২ রানে নামিয়ে আনেন নেওয়াজ-ওয়াসিম। এখান থেকেও বিপদ হতে পারতো। ১৯তম ওভারটি করেন জিম্বাবুয়ে পেসার রিচার্ড এনগারাভা। প্রথম ৩ বলে ৪ রান দেওয়ার পর চতুর্থ বলে নেওয়াজের পায়ের ওপর ফুল টস করে বসেন এনগারাভা। ছক্কা মেরে ম্যাচটা সহজ করে ফেলেন নেওয়াজ। জয়ের জন্য শেষ ওভারে দরকার ১১ রান।
শেষ ওভারটি করেন জিম্বাবুয়ে পেসার ব্রাড ইভানস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ ম্যাচ দিয়ে অভিষিক্ত ইভানস চাপ সামলাতে পারেননি। প্রথম বলটি হাফ ভলি করায় ৩ রান নেন নেওয়াজ। পরের বলটি ছিলো স্লোয়ার, ওয়াসিম বোকা হননি। স্ট্রেট দিয়ে চার মারেন ওয়াসিম। জয়ের জন্য শেষ ৩ বলে দরকার ছিলো ৩ রান। চতুর্থ বলটি ‘ডট’ হওয়ায় আবারো চাপে পড়ে পাকিস্তান। এরপর আউট! পঞ্চম বলে নেওয়াজ (১৮ বলে ২২) তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অফে। জয়ের জন্য শেষ বলে দরকার ৩ রান। কী হবে!
শেষ বলে শাহিন আফ্রিদি ২ রান নিতে গিয়ে পেরেছেন ১ রান নিতে। ১ রানের দুর্দান্ত জয়ে সুপার টুয়েলভের এই ম্যাচটি স্মরণীয় করে রাখলো জিম্বাবুয়ে।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক শন উইলিয়ামস। আরভিন-মেধেভেরে বেশ দ্রুতই এগোচ্ছিলো জিম্বাবুয়ে। দু’জন মিলে ওপেনিং জুটিতে ৪২ রান তোলে। এরপরই ছন্দপতন। পঞ্চম ওভারের শেষ বলে হ্যারিস রউফের বলে ওয়াসিমের হাতে ধরা পড়েন আরভিন। ফেরার আগে তিনি করেন ১৯ বলে ১৯ রান।
পরের ওভারে ওয়াসিমের দ্বিতীয় বলে মেধেভেরেকে সাজঘরে ফেরেন। যে কারণে দ্রুত সময়ের মধ্যে চাপে পড়ে দলটি। ঠিক সে সময় হাল ধরার চেষ্টা করেন শন উইলিয়ামস। তবে যোগ্য সঙ্গ পাননি তিনি।
এ সুযোগে একের পর এক উইকেট তুলে নেন শাদাব ও ওয়াসিম। শেষ দিকে আরো আটোসাটো বোলিং করেন হারিস রউফ। যে কারণে জিম্বাবুয়ে থামে ১৩০ রানে। দলটির হয়ে সর্বোচ্চ ৩১ রান শন উইলিয়ামস।
পাকিস্তানের পক্ষে মোহাম্মদ ওয়াসিম ও শাদাব খান নেন ৩টি করে উইকেট। এছাড়া ১ উইকেট নেন হ্যারিস রউফ।