শেষরক্ষা হলো না পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের। অনাস্থা ভোটে পরাজয় নিশ্চিত জেনে অবশেষে ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির’ মাধ্যমে নিরাপদ প্রস্থানের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। খবর জিও নিউজ।
খবরে বলা হয়েছে, ‘গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব’ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের প্রস্তাব বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরিফকে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনের পূর্বে বিরোধী নেতারা এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করলে ঘটনাটি সামনে আসে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে—ইমরান খান ‘নিরাপদ প্রস্থান কিংবা সংসদ ভেঙে দেওয়ার’ প্রস্তাব দিয়েছেন। এটা না মানলে যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রস্তুত রয়েছেন। তবে অধিকাংশ বিরোধী দলীয় নেতা ইমরান খানকে ‘বিশ্বাস না’ করতে মত দিয়েছেন। তারা দ্রুত অনাস্থা ভোট আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বিরোধীরা বলছেন, তারা সংখ্যাই বেশি। সুতরাং দ্রুত প্রক্রিয়া শেষ করলে তারা লাভবান হবেন। বিরোধীরা আরও বলছে, ইমরান খানের মুখ রক্ষার একটা উপায়, সেটা হলো—পদত্যাগ করা।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াইয়ে অনাস্থা ভোটে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছেন ইমরান খান।
গতকাল বুধবার ইমরানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ছাড়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট-পাকিস্তান (এমকিউএম-পি)। পার্লামেন্টে তাদের সাতজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। ভোটের আগে বিরোধীদের সঙ্গে তাদের হাত মেলানো ধুঁকতে থাকা পিটিআই সরকারের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি অবশ্য তাৎক্ষণিক এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, ‘বিরোধী জোট ইতোমধ্যেই ঐক্যবদ্ধ এবং এমকিউএম নিজেদের মধ্যে চুক্তি করেছে।’
আগামী ৩ এপ্রিল পাকিস্তানের সংসদে আস্থা ভোট। সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ৩৪২। ম্যাজিক ফিগার ১৭২। অর্থাৎ ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইমরান খানের প্রয়োজন ১৭২টি ভোট। ইমরান খানের দল ক্ষমতাসীন পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ’র (পিটিআই) জোট শরিক এমকিউএমের ভোট ছিল ৭টি। এমকিউএম বিরোধী দলের সঙ্গে হাত মেলানোর পর ঐক্যবদ্ধ বিরোধী দলের পক্ষে সংসদ সদস্যের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৭। ইমরানের সমর্থনে আছেন ১৬৪ জন সদস্য। সংখ্যার এই সমীকরণ জারি থাকলে ইমরানের সরকার গদিচ্যুত শতভাগ নিশ্চিত।
বৃহস্পতিবার সকালে জিও টিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯-১৪২ ভোটে পিছিয়ে পড়েছেন ইমরান। তবে চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য রো্ববার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এদিন জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সবমিলিয়ে শেষ মুহূর্তে নাটকীয় কোনো পটপরিবর্তন না ঘটলে, জীবনের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের স্বাদ নিদে হবে ইমরান খানকে। সারাদেশে পাওয়ার শো, ইসলামাবাদের প্যারেড ময়দানে গণসমাবেশ- কিছুতেই শেষরক্ষা হলো না। এমনও শোনা যাচ্ছে, সম্ভবত সংসদের বাইরেই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিতে পারেন ইমরান খান। তবে এর উল্টোপিঠও কম একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।
পাকিস্তানের জনপ্রিয় দৈনিক ডনের খবর মোতাবেক, ৩ এপ্রিল জাতীয় পরিষদে অনাস্থা প্রস্তাবে ভোটাভুটির দিন পিটিআই এমপিদের কেউই যেন উপস্থিত না থাকেন। থাকলেই ভোট দেওয়া থেকে যেন বিরত থাকেন। মঙ্গলবার শেষবেলাতেই শেষ রক্ষাকবচ হিসাবে দলীয় এমপিদের উদ্দেশে এ নির্দেশ দেন ইমরান খান। গদি রক্ষার এই শেষচেষ্টা কতটুকু সফল হবে তা নিয়েও চিন্তার ভাঁজ খোদ দলের অন্দরমহলেই। সরকারি এমপিরা চুপ থাকলেও বিরোধীরা কি বসে থাকবেন? তাদের ভোট তো পড়বেই।
২৮ মার্চ পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন বিরোধীরা। তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশে নেতৃত্ব দেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফ । তখন থেকেই শুরু হয় জল্পনা। আগামী সাত দিনের মধ্যেই পদত্যাগ করতে পারেন ইমরান। নয়া প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর নেতা তথা নওয়াজের ভাই শাহবাজই।