এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই। এডিবির বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেছেন, ‘বাংলাদেশ ঋণের ফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা এবং ঋণ ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন’।
এডিবির নিয়মিত প্রকাশনা এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০২২ প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে বুধবার (৭ এপ্রিল) অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির বাংলাদেশপ্রধান।
তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশি ঋণ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক ভালো। শ্রীলঙ্কার সেখানে বড় দুর্বলতা ছিল। এ ছাড়া যুদ্ধের পর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো-খারাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। কোভিড-১৯ মহামারীতে যা আরো নাজুক হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতি ধারাবাহিকভাবে ভালো করেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে সৃষ্ট ঘাটতি থেকেও দ্রুত পুনরুদ্ধারের পথে রয়েছে বাংলাদেশ’। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এডিবির পর্যবেক্ষণ থেকে কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি এখনো মধ্যম বা সহনীয় পর্যায়ে আছে। এ সময় এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট চুন চ্যাং হ্যাং এবং অন্য কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
এডিবির পূর্বাভাস প্রতিবেদন বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে ৭.১ শতাংশে দাঁড়াবে। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে এই হার ছিল ৬.৯ শতাংশ। এডিবির মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতি টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের ‘সঠিক পথেই’ আছে।
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে বাংলাদেশ সরকার ৭.২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে। সেই হিসাবে এডিবির প্রাক্কলন কিছুটা কম। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এবার বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬.৪ শতাংশ। আর আইএমএফ ৫.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশের ভেতরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও গতি সঞ্চার হয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে। করোনা মহামারির অভিঘাত সামাল দিতে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন এবং রেমিট্যান্স প্রবাহও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।
অবশ্য প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়ার পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৫.৬ শতাংশ থেকে বেড়ে মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালে পৌঁছাতে পারে ৬ শতাংশে। তা ছাড়া আমদানি বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহে টান পড়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতিও বাড়বে বলে মনে করছে এডিবি। ২০২১ সালে সরকারের চলতি হিসাবের ঘাটতি ছিল জিডিপির ০.৯ শতাংশ, যা ২০২২ সালে বেড়ে জিডিপির ২.৭ শতাংশে পৌঁছতে পারে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ার ক্ষেত্রে তেল ও আমদানি খাতে মূল্যবৃদ্ধি এবং রপ্তানি আয় কমাকে মূল ঝুঁকি হিসেবে দেখানো হয়েছে এডিবির প্রতিবেদনে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।