কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢুকে যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট ও নাশকতা চালিয়েছে তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। হত্যাকাণ্ডসহ যে সব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সে সব বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। কাদের উস্কানিতে এ সংঘর্ষ শুরু হলো, কারা কোন উদ্দেশ্যে অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল তা তদন্ত করে বের করা হবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ ভাষণে এসব কথা বলেন তিনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের অন্য সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ সরাসরি প্রচার করে।
ভাষণের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যন্ত বেদনা ও ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আজ এসেছি। আর্থ সামজিক উন্নয়নে গত ১৫ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের এখনও অনেক দূর যেতে হবে। যখন মানুষ শান্তিতে আছে তখন যখন এ রকম ঘটনা হয় তা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ তে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করে তখন সরকার কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। পরে এটি নিয়ে কয়েকজন হাইকোর্টে গেলে তা বাতিল করা হয়। সরকার পরিপত্র বহাল রাখতে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে। আদালত শুনানির দিনও ধার্য করেছে। হাইকোর্টের রায়ের পর ছাত্ররা কোটা সংস্কারের দাবিতে আবার আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীল আচরণ করেছে। পুলিশও তাদের সহযোগিতা করেছে। নিরাপত্তা দিয়েছে। আন্দোলনকারীরা যখন মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেয়ার কথা জানায়, তখন তাদের সুযোগ করে দেয়া হয়। নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করে বলেন, কিছু মহল কোটা আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে, তা খুবই বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কতগুলো মূল্যবান জীবন ঝরে গেল। যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। তাদের পরিবারকে সহানুভুতি জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামে ছাত্রদের অনেককে ছাদ থেকে ফেলে দেয় সন্ত্রাসীরা। এতে একজন মারা যান। অনেকেরই হাত পা ভেঙে গেছে। এছাড়াও অনেকে আহত হয়েছেন। সাধারণ পথচারি-দোকানিকে আক্রমণ করা হয়েছে। মেয়েদের হলে ছাত্রীদের আক্রমণ করা হয়েছে। আবাসিক হলের প্রভোস্টদের হুমকি দেয়া হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, এই সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোটা আন্দোলনকারীদের কোনো সম্পর্ক নেই।
আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসার পর্যন্ত ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেছে। আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা শোনার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এই আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের সুযোগ রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যারা হত্যার শিকার হয়েছেন তাদের পরিবার-পরিজনের জীবন-জীবিকার বিষয়টির সহযোগিতা করবে সরকার। আপনজন হারানোর বেদনা যে কত কষ্ট, তা আমার চেয়ে আর কেউ বেশি জানে না।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় উদ্বেগ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। সন্ত্রাসীরা যাতে শিক্ষার্থীদের কোনো ক্ষতি করতে না পারে এ জন্য পিতা–মাতা, অভিভাবক ও শিক্ষকদের অনুরোধ তারা যেন তাদের নিরাপত্তার বিষয়ে সজাগ থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আইনি প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না। সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার জন্য আমি সকলকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমার বিশ্বাস তারা ন্যায়বিচার পাবে, হতাশ হতে হবে না।