তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের রাষ্ট্রে ন্যায়, জ্ঞান, যুক্তিভিত্তিক সমাজ গঠন করতে চান। আর সেজন্যে সমাজে বিতর্ক প্রয়োজন। বিতর্ক ছাড়া ন্যায়ভিত্তিক গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গঠন সহজ হয় না।
তিনি বলেন, সমালোচনাবিহীন সমাজ হতে পারে না। সমাজে সমালোচনা থাকতে হবে, দায়িত্বে যারা থাকবে তাদের সমালোচনা অবশ্যই হবে। দায়িত্বে না থাকলে তো সমালোচনা নাই। বিতর্ক হতে হবে, তাহলেই সমাজ এগিয়ে যাবে।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র আয়োজিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রথম জাতীয় টেলিভিশন বিতর্ক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সারাদেশ থেকে ১০৪ টি দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সোহরাব হোসেনের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম কেন্দ্রের স্টুডিওতে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আশরাফ উদ্দিন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজা আক্তার।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন অনেকদিন বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেনি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়ার পর জিজ্ঞেস করলাম কেন বিতর্ক প্রতিযোগিতা বন্ধ করে দেয়া হলো? তখন আমাকে টেলিভিশনের কর্মকর্তারা বললেন, সরকারেরও অনেক সমালোচনা হয়, সেজন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আমি বললাম, সমালোচনা তো হতে হবে। সরকারেরও সমালোচনা হতে হবে। তখন আমি সিদ্ধান্ত দিলাম বিটিভি’র দুটি কেন্দ্রে বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করার।’
সেই বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের বিষয় ছিল ‘শুদ্ধাচার ও নৈতিকতা গঠনে পরিবারের চেয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাই বেশি।’ এরকম একটা বিষয়কে পছন্দ করার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, আসলে নৈতিকতা এবং শুদ্ধাচার সুষ্ঠু সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবিক অর্থে সমগ্র বিশ্বব্যাপী মানুষ প্রচণ্ডভাবে যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে। যন্ত্রের ব্যবহারের সাথে সাথে মানুষও যন্ত্রের মত জড় পদার্থ হয়ে যাচ্ছে এবং সেটির সাথে নৈতিকতা এবং মানবিকতাও লোপ পাচ্ছে। এটি সমগ্র বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। মানবজাতিকে যদি টিকিয়ে রাখতে হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ প্রয়োজন।
তিনি বলেন, মানুষ যদি যন্ত্রের মত জড় পদার্থ হয়ে যায়, নৈতিকতা এবং মানবিকতা হারিয়ে যায়, তাহলে তো মানুষ আর মানুষ থাকে না। এই ক্ষেত্রে এখানে পরিবার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির’ই ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারো চেয়ে কারো ভূমিকা কম নয়।
বিজয়ী এবং রানার-আপ দুই দলকে অভিনন্দন জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, আমি নিজেও স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। কখনো তৃতীয় হইনি। আমি নিজের জীবনের পেছনে ফিরে তাকালে বুঝি, যারা আজকে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে তাদের মধ্যে যে দক্ষতা ও কনফিডেন্স তৈরি হয় জীবন চলার পথে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ তাদেরকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউন্ডে স্কুল, দ্বিতীয় রাউন্ডে কলেজ, তৃতীয় রাউন্ডে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিতর্ক প্রতিযোগীরা অংশ নেন। সুদূর রংপুর থেকেও দল এসেছে। শূন্য দশমিক ৬৬ পয়েন্টের ব্যবধানে একটি দল বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি দুটি দলই বিজয়ী হয়েছে। কারণ হচ্ছে ০ দশমিক ৬৬ কোন ব্যবধান নয়।
অনুষ্ঠান শেষে বিতর্ক প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের বিজয়ী দল বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় ও রানার-আপ দল জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রতিযোগীদের হাতে ট্রফি ও সম্মাননার চেক তুলে দেন মন্ত্রী। পরে বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিল্পী ও কলাকুশলীদের সুবিধার্থে পুনরায় সংস্কারশেষে বিটিভি ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।