বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে সারাদেশের মহানগরে গণমিছিল করেছে বিএনপি। বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দলগুলোও ঢাকায় গণমিছিল করেছে। কেন্দ্রের অংশ হিসেবে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি আলাদাভাবে দুটি মিছিল করে।
বিকেল ৪টায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি রাজধানীর দয়াগঞ্জ থেকে গণমিছিল শুরু করে। মিছিল শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম। এছাড়াও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েস্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গণমিছিলটি সায়েদাবাদ ব্রিজ, ধলপুর কমিউনিটি সেন্টার, গোলাপবাগ, কমলাপুর, বৌদ্ধমন্দির হয়ে খিলগাঁও এসে শেষ হয়।
একই সময়ে রাজধানীর গুলশান-১ থেকে গণমিছিল শুরু করে মহানগর উত্তর বিএনপি। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে আরও অংশ নেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালী, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ রাশেদুজ্জামান মিল্লাত প্রমুখ।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের নামে আওয়ামী লীগ সরকার আবার নতুন ফন্দি বের করেছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এরা নাকি পেনশন ভাতা দিবে। এরা টাকা চুরি করার আরেকটা নতুন ফন্দি করছে। সেই টাকা চুরি করে ভোট করবে এরা।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, কোনো দিকে পথ নেই, উত্তরে পর্বতমালা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, কোনো দিকে ওদের যাওয়ার আর পথ নেই। আর কোনো সময় নাই। মানে এখনি পদত্যাগ করো। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাও, সংসদ বিলুপ্ত করো, নতুন নির্বাচন কমিশন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করো।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, একটি কথাই বলা যায়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তার অধীনে আমরা কোনো নির্বাচনে যাবো না। গণতান্ত্রিক অধিকার আমাদের উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ভারত যদি আবার ১৪ সালের মতো শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে চায়, চ্যালেঞ্জ, এদেশের ১৮ কোটি জনগণ এবার ছাড়বে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সকালে মার্কিনীদের গালি দেয় বিকেলে আবার ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষে তারাই আমাদের বন্ধু।
মহানগর উত্তর বিএনপির গণমিছিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, এই সরকার ১৫ বছর ক্ষমতায় আছে, কিন্তু কথা বললে শোনে না। এদের ধাক্কা দিয়ে সরাতে হবে। ১৫ বছরে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে, সরকারের পরিবর্তন হয় না। আমাদের আর কোনো ভয় নেই, দেশের মানুষ গুম, হত্যাকে ভয় পায় না। মানুষ মরতে ভয় পায় না।
তিনি বলেন, আমাদের গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে, হয়রানি করে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্ত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন মির্জা আব্বাস।
বিএনপির পাশাপাশি এক দফায় রাজধানীতে গণমিছিল করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, গণফোরাম, পিপলস পার্টি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট।
আগামীকাল শনিবার রাজধানীতে পদযাত্রা করবে বিএনপি। দলটির নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মগবাজার পর্যন্ত পদযাত্রা করবে।