আব্দুর রহিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় স্বামী পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আজম এ আদেশ দেন।
আসামী রফিকুল ইসলাম ঝিনাইদহ জেলা সদরের হলিধানী প্রতাপপুর গ্রামের মৃত আফছার আলীর ছেলে ও বরগুনা জেলার তালতলি থানার তদন্ত ওসি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার পূর্ব নারায়নপুর গ্রামের ঠিকাদার মৃত আব্দুল মজিদের মেয়ে তানিয়া আফরিনের সাথে ২০১৩ সালের ২২ মার্চ কালিগঞ্জ থানায় উপ-পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিন লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয় ঝিনাইদহ সদরের হলিধানী গ্রামের রফিকুল ইসলামের। বিয়ে আগে ৫ লাখ ও বিয়ের পর ১৩ লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে নেয় রফিকুল। এরপরও ২০ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে ঢাকার উত্তরার বাসা থেকে মারপিট করে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর তাড়িয়ে দেয় রফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা। ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর মীমাংসার নামে কালিগঞ্জের পূর্ব নারায়নপুর গ্রামে এসে স্ত্রীকে দোতলায় ডেকে নিয়ে সেখানে কেউ না থাকার সুযোগে মারপিট করে চলে যায় রফিকুল ইসলাম। মারাত্মক জখম অবস্থায় তানিয়াকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি তানিয়া তার স্বামী রফিকুল, শাশুড়ি রাহেলা, দেবর সাইফুল ও সাইফুলের স্ত্রী নাহারের নামে সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পিটিশন ২৯/২১ মামলা দায়ের করেন। বিচারক এমজি আযম মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলায় বাদি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এড. আব্দুল মজিদ (২) এর সেরেস্তার এড. বসির আহম্মেদ। বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার ছয় জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতা আছে মর্মে গত বছরের ২২ মার্চ আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এমজি আযম আসামী রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
তানিয়া আরেফিনের অভিযোগ, বাদিপক্ষের আইনজীবী এড. বসির আহম্মেদ হলেও আসামীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে একই সেরেস্তার আব্দুল মজিদ (২) হওয়ায় তিনি অবাক হয়ে যান। কারণ এড. আব্দুল মজিদের পরামর্শ অনুযায়ি তারই সেরেস্তায় মামলা করা হয়। একপর্যায়ে আসামী মীমাংসার নামে তিন বার জামিন নেন। বিপদ বুঝে তিনি আইনজীবী পরিবর্তন করেন। রবিবার আসামীপক্ষের আইনজীবী আসামী রফিকুলের স্থায়ী জামিনের (না: শিশু ৩৬৪/২১) আবেদন করেন। তার পক্ষের আইনজীবী বিশেষ পিপি এড. জহুরুল হায়দার বাবু, এড. এসএম হায়দার, এড. তপন কুমার দাস জামিন বাতিলের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানী শেষে বিচারক এমজি আযম আসামী রফিকুল ইসলামের জামিন বাতিল করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এড. আব্দুল মজিদ (২) এর সাথে তার মোবাইল ফোনে যোগযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালেল বিশেষ পিপি এড. জহুরুল হায়দার বাবু পুলিশ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলামের জামিনাবেদন নাকচ করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।