জাবি প্রতিনিধি-আসিবুল ইসলাম রিফাত
হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ ৭দফা দাবিতে হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের আবাসিক ছাত্রীরা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে হলের সামনে অবস্থান নিয়েছে হলের ছাত্রীরা। ঘটনার সাড়ে তিনঘণ্টা পার হলেও হলে উপস্থিত হননি প্রভোস্ট অধ্যাপক নাহিদ হক।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- বাজে ক্যান্টিন বন্ধ করে নতুন ক্যান্টিন চালু, ডাইনিংয়ের খাবারের মান বাড়নো, হল সংস্কারের নামে দীর্ঘ সূত্রিতার দ্রুত অবসান ও সংস্কার কার্যক্রম যথাযথ পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা, নতুন নতুন নিয়মের নামে ছাত্রীদের হয়রানি বন্ধ, হল পূর্ণরূপে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা ও রিডিং রুম নির্মাণ।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, ক্যান্টিনের নিম্ন মানের খাবারের বিষয়ে বেশ কয়েকবার হল সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের সাথে সরাসরি কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। শিক্ষার্থীদের যেকোনো কাজে প্রভোস্টকে পাওয়া যায় না। এছাড়া শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন প্রভোস্টকে তারা মোবাইল কল দিলে তিনি মোবাইল নাম্বার ব্লক করে দেন।
আরও জানা যায়, ঈদুল আজহার বন্ধের পর নওয়াব হলে কালু মিয়া নামে এক ব্যক্তি হল প্রশাসনের নিয়োগের ভিত্তিতে নতুন ক্যান্টিন চালু করেন। প্রথম দিকে ক্যান্টিনে খাবারের অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করায় শিক্ষার্থীরা সাধারণ সভায় খাবারের দাম কমানোর প্রস্তাব দেয়। পরে খাবারের দাম কমানো হলে ক্যান্টিন মালিক ছাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা শুরু করেন।
এসময় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের আবাসিক ছাত্রী সুলতানা আফরিন টুম্পা বলেন, ‘এরআগে দুই হল থেকে বিতারিত ‘কালুর ক্যান্টিন’ কে আমাদের হলে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ক্যান্টিন এতোটাই অপরিষ্কার থাকে যে বসে খাবার খাওয়ার মতো পরিবেশ নেই। ক্যান্টিনের বিষয়ে বেশ কয়েকবার শিক্ষকদের সাথে সরাসরি কথা বলা হলেও কোন লাভ হয়নি। আমদের কোন সমস্যাতেই কখনো প্রভোস্ট সামনে আসেনি। তাকে কখনো আমাদের প্রয়োজনে হলে পাওয়া যায় না।’
সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ণ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শ্রাবণী আক্তার বলেন, ‘নতুন নিয়োগ পাওয়া ক্যান্টিনের মালিকের মেয়ে সুইটির আচরণ খুবই খারাপ। তিনি তুই-তুকারি করে কথা বলেন। এছাড়াও হলের সংস্কার কাজে দীর্ঘ সূত্রিতার জন্য শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য হল প্রভোস্টকে আমরা হলে পাই না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, ‘খালারা চামচের বদলে হাত দিয়ে প্লেটে খাবার তুলে দেন। আমি হাফ ভাত ও সাথে লটপটি নেওয়ায় তরকারির পরিমাণ কম দেওয়া হয়। এসময় আরেকটু তরকারি দিতে বলায় সে বলে এত টুকু ভাতে এর বেশি তরকারি দিয়ে কী করবেন আপনি?’
এসময় শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সম্পর্কে হলের ওয়ার্ডেন ও পরিসংখ্যান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দাবিগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুদিন আগে অবগত হয়েছি। শুধুমাত্র তিন মাসের জন্য হলের নতুন ক্যান্টিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। আর ক্যান্টিন কর্মচারীর খারাপ আচরণের কথা আজই জানানো হয়েছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় রাত সাড়ে নয়টার দিকে প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। এসময় তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কল্যাণ হবে এমন সিদ্ধান্তই আমরা নিবো। আশা করি শিক্ষার্থীরাও তাদের ভালোটাই বুঝবে।’ এসময় শিক্ষার্থীরা প্রভোস্ট কমিটির সভাপতির আশ্বাসে হলে ফিরে যায়।
উল্লেখ্য, পঁচা খাবার পরিবেশন করার অভিযোগে কালুর ক্যান্টিনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হল ও ফজিলাতুন্নেছা হলের ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হয়।