সাভারে স্কুলশিক্ষক গোলাম কিবরিয়াকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। আটকরা হলেন- ইমন খান, মো. সাগর ও ছাদেক গাজী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে হত্যার পর লুণ্ঠিত ৫ লাখ ২১ হাজার ৯৯ টাকা। র্যাব জানায়, ডাকাতির উদ্দেশ্যেই ওই শিক্ষককে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে চিরকুট লিখে রাখে ডাকাত দলের এক সদস্য।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
আল মঈন বলেন, গত ২০ আগস্ট বিকেলে সাভার পৌরসভার ভাটপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির একটি ঘর থেকে হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় গোলাম কিবরিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তখন মরদেহের পাশেই একটি চিরকুট পাওয়া যায়। তাতে লেখা ছিল- ‘এই ব্যক্তি সমকামী করে পুলিশ ভাই, আমরা তাই মেরে ফেলেছি, ভাই ও অবৈধ কাজ করে… আমরা ইসলামের সৈনিক।’ এ ঘটনায় নিহতের ভাই সাভার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে গোয়েন্দা নজদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। এর ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে র্যাব-৪, ৬ ও ১৩-র যৌথ দল তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, গোলাম কিবরিয়া কয়েক বছর ধরে নিজ বাড়িতে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। পাশাপাশি জমি কেনা-বেচার কাজ করতেন। একটি ঘরে তিনি একাই থাকতেন। ২০ আগস্ট দুপুর ২টা পর্যন্ত তিনি ঘুম থেকে না ওঠায় বাড়ির লোকজন তাকে ডাকাডাকি করে। সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে তারা ঘরের পেছনে গিয়ে সেদিককার দরজা খোলা দেখতে পান। পরে ঘরের ভেতর ঢুকে খাটের ওপর লুঙ্গি দিয়ে হাত-পা বাঁধা ও গলায় গামছা পেঁচানো অবস্থায় তার মৃতদেহ দেখতে পান। তার ঘরের মালপত্র এলোমেলো ও আলমারি খোলা অবস্থায় ছিল।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ইমনের পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ড ঘটে। সাগর পেশায় অটোরিকশাচালক। ওই শিক্ষক মাঝেমধ্যেই তার রিকশায় যাতায়াত করতেন। এই সুবাদে তাদের সুসম্পর্ক ছিল। ছয় মাস আগে সাগর তার বন্ধু ইমনকে শিক্ষকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ইমন ও সাগর ওই বাসায় মাঝেমধ্যে যেতেন। গোলাম কিবরিয়া জমি কেনাবেচার টাকা বাসায় রাখতেন- বিষয়টি তাদের নজরে আসে। তখন তারা তাকে হত্যা করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ইমন পরিকল্পনার বিষয়টি ঘটনার ৭-৮ দিন আগে তার বন্ধু ছাদেককে জানান। ছাদেকের বিভিন্ন জায়গায় ঋণ থাকায় তিনি এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ আগস্ট ইমন শিক্ষককে ফোন করে তার সঙ্গে দেখা করতে চান। এরপর রাত পৌনে ১১টায় ইমন ও ছাদেক ভিকটিমের বাসায় উপস্থিত হন। এ সময় পরিকল্পনা অনুযায়ী সাগর অটোরিকশা নিয়ে আশপাশে অবস্থান করেন। ওই বাসায় নাস্তা শেষে আলাপচারিতার একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন ছাদেক ভিকটিমের গলা এবং ইমন মুখ চেপে ধরেন। পরবর্তীতে তারা ভিকটিমের লুঙ্গি দিয়ে হাত-পা বেঁধে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। শেষে হত্যাকাণ্ড ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ছাদেক একটি সাদা কাগজে চিরকুট লিখে মৃতদেহের পাশে রেখে দেন। ইমন ভিকটিমের বিছানার নিচ থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৪টি মোবাইল ফোন লুট করেন। পরে সাগরের অটোরিকশায় উঠে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
র্যাবের মুখপাত্র জানান, প্রাথমিকভাবে এ ঘটনাকে ডাকাতির উদ্দেশ্যে খুন বলেই মনে হয়েছে। তবে এখানে মতাদর্শগত কোনো বিষয় আছে কি না, গ্রেপ্তারকৃতরা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ বা কোনো জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।